দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, স্ত্রী বুশরা বিবির ১৭ বছরের কারাদণ্ড
তোশাখানার রাষ্ট্রীয় উপহার কম দামে কেনার অভিযোগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে পৃথকভাবে ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। শনিবার এই রায় ঘোষণা করা হয় বলে আদালত সূত্র ও ইমরান খানের আইনজীবীরা নিশ্চিত করেছেন।
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দি থাকা ইমরান খানের জন্য এই রায় নতুন করে বড় আইনি ধাক্কা হয়ে এলো। বর্তমানে তিনি জমি সংক্রান্ত দুর্নীতির আরেকটি মামলায় ১৪ বছরের সাজা ভোগ করছেন। ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসসহ কয়েক ডজন মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগ তিনি বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দাবি করছে, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইমরান খানের পারিবারিক আইনজীবী রানা মুদাসসর উমর রয়টার্সকে বলেন, 'আদালত আত্মপক্ষের কোনো বক্তব্য না শুনেই রায় ঘোষণা করেছেন এবং ইমরান খান ও বুশরা বিবিকে ১৭ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি বড় অঙ্কের জরিমানা করেছেন।'
পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এফআইএ) বিশেষ আদালত রায়ে উল্লেখ করেন, দণ্ডবিধির অধীনে 'বিশ্বাসভঙ্গের' অপরাধে তাদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় আরও সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, বর্তমানে ইমরান খানের যে ১৪ বছরের সাজা চলছে, তা শেষ হওয়ার পরই শনিবার ঘোষিত নতুন ১৭ বছরের কারাদণ্ড কার্যকর হবে।
এই মামলার সূত্রপাত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি হাতঘড়িকে ঘিরে। প্রসিকিউশনের দাবি, ইমরান খান ও তার স্ত্রী রাষ্ট্রীয় বিধি লঙ্ঘন করে তোশাখানা থেকে এসব উপহার অত্যন্ত কম দামে কিনেছিলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এতে রাষ্ট্রের কয়েক মিলিয়ন রুপি ক্ষতি হয়েছে।
ইমরান খানের মুখপাত্র জুলফি বুখারি বলেন, এই রায় 'বিচারের মৌলিক নীতিগুলোকে উপেক্ষা করেছে' এবং এটি মূলত 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসার' হাতিয়ার। ইমরানের আরেক আইনজীবী সালমান সফদর সাংবাদিকদের জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করার নির্দেশ দিয়েছেন ইমরান খান।
উল্লেখ্য, এই মামলাটি আগের একটি তোশাখানা মামলার থেকে আলাদা। গত বছরের আগস্টে অন্য একটি উপহার সংক্রান্ত মামলায় ইমরান খানকে ১৪ বছর এবং বুশরা বিবিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরে আপিলের পর সেই সাজা স্থগিত করা হয়। পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের পাওয়া উপহার সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত ভাণ্ডারকেই 'তোশাখানা' বলা হয়।
রায় ঘোষণার পরপরই ইমরান খানের দল পিটিআই রবিবার পাঞ্জাবজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। দলটির অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর পরিবার কিংবা আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, বন্দি হিসেবে তিনি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছেন।
ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদে রূপ নেওয়া ইমরান খান এখনও পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তার দল বর্তমানে ক্ষমতার বাইরে থাকলেও, তাঁকে ঘিরে চলমান এই আইনি লড়াই দেশটির রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
