ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক কীভাবে পূর্বাচল প্লট বরাদ্দে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন
ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলার অন্যতম কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। এই মামলায় আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) তিনি, তার মা শেখ রেহানা এবং তার খালা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
রাজউকের পূর্বাচল নিউ মডেল টাউন প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বেশ কয়েকটি ১০ কাঠা প্লট দখলে অনিয়মের অভিযোগে ঢাকার একটি আদালত এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত রেহানাকে সাত বছরের কারাদণ্ড, টিউলিপকে দুই বছরের এবং হাসিনাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ জানুয়ারি শেখ রেহানাকে প্রধান আসামি, টিউলিপ সিদ্দিককে দ্বিতীয় আসামি এবং শেখ হাসিনাকে তৃতীয় আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয়।
মামলার নথি অনুসারে, টিউলিপ জানতে পারেন তার খালা শেখ হাসিনা নিজের নামে এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নিচ্ছেন। এটি জানার পর তিনি ব্রিটিশ এমপি হিসেবে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিবের নামে ওই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন।
মামলায় প্রথমে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে গত ১০ মার্চ এই মামলায় আরও দুজনের নাম উল্লেখ করে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। ৩১ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয় এবং ১৩ আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
প্লট কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা আরেকটি মামলায়ও টিউলিপকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, ওই মামলায় তার বোন আজমিনা প্রধান আসামি।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে শেখ হাসিনা পদচ্যুত হওয়ার পর তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। প্লট কেলেঙ্কারির মামলাটি টিউলিপের বিরুদ্ধে করা কয়েকটি মামলার একটি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নয়টি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগেও মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
গত ১৫ এপ্রিল দুদক তার বিরুদ্ধে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড থেকে টাকা না দিয়ে গুলশানে একটি ফ্ল্যাট অবৈধভাবে গ্রহণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে।
২০১৫ সাল থেকে ব্রিটেনের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপি টিউলিপ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
তিনি যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বিষয়টি যুক্তরাজ্যের একটি নজরদারি সংস্থার কাছে তদন্তের জন্য পাঠান।
সাবেক প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের তদন্ত চলতে থাকায় এসব আইনি প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত।
