হয় ইউক্রেনীয় সেনারা নিজ থেকে সরে যাবে, নাহয় আমরা জোর করে দনবাস দখলে নেব: পুতিন
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে কোনো ধরনের ছাড় বা আপস করতে নারাজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস এলাকা থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সরিয়ে নিতে হবে। তা না হলে রাশিয়া জোর করে ওই এলাকা দখল করবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'ইন্ডিয়া টুডে'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, 'হয় আমরা শক্তি প্রয়োগ করে এই অঞ্চলগুলো মুক্ত করব, অথবা ইউক্রেনীয় সেনারা নিজেরাই সেখান থেকে সরে যাবে।'
বর্তমানে দনবাসের প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দেশের কোনো ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এমন মন্তব্য করেন পুতিন। গত মঙ্গলবার মস্কোয় ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, তার মনে হয়েছে পুতিন 'যুদ্ধ শেষ করতে চান'। মঙ্গলবারের আলোচনা 'বেশ ভালো' হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, 'ভবিষ্যতে কী হবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ, এক হাতে তালি বাজে না।'
মস্কোয় আলোচনা শেষে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এখন ফ্লোরিডায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এদিকে ক্রেমলিন আজ শুক্রবার জানিয়েছে, তারা ওয়াশিংটনের জবাবের অপেক্ষায় আছে। ক্রেমলিনের সহযোগী ইউরি উশাকভকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা আরআইএ জানায়, 'মঙ্গলবার আমাদের যে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা আমেরিকান সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।'
তবে তিনি জানিয়েছেন, আপাতত পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের কোনো পরিকল্পনা নেই এবং উইটকফের সঙ্গে নতুন বৈঠকের দিনক্ষণও ঠিক হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের মূল শান্তি পরিকল্পনায় প্রস্তাব ছিল, দনবাসের যেসব এলাকা এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলো কার্যত পুতিনের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে মস্কো সফরে ট্রাম্পের দূত উইটকফ ও তার দল সেই পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এনে সংশোধিত একটি সংস্করণ উপস্থাপন করেছেন।
দিল্লি সফরের আগে এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি নতুন এই প্রস্তাব দেখেননি। পুতিন বলেন, 'এ কারণেই আমাদের প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে আলোচনা করতে হয়েছে এবং এতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।'
পুতিন স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কিছু অংশের সঙ্গে মস্কো একমত হতে পারেনি। তিনি বলেন, 'কিছু ক্ষেত্রে আমরা বলেছি—হ্যাঁ, এটা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু ওই বিষয়টিতে আমরা একমত হতে পারছি না।'
যদিও ঠিক কোন কোন বিষয়ে অমিল হয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি পুতিন। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, রুশ বাহিনীর দখলে থাকা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা—এই দুটি বিষয় নিয়েই মূলত এখনো মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
'গোটা বিশ্বের সময় নষ্ট করছেন পুতিন'
এর আগে পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বৈঠকের পরপরই বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে 'কোনো আপস' হয়নি। তিনি ইঙ্গিত দেন, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সাম্প্রতিক সাফল্যের কারণে আলোচনার টেবিলে তাদের অবস্থান এখন আরও শক্তিশালী।
এদিকে ইউক্রেন বারবারই অভিযোগ করে আসছে, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে গড়িমসি করছে যাতে তারা আরও বেশি ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখল করতে পারে। ক্রেমলিনের আলোচনা প্রসঙ্গে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিগা বলেন, পুতিন আসলে 'বিশ্বের সময় নষ্ট করছেন'।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা চালায় রাশিয়া। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড মস্কোর দখলে। সম্প্রতি ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান শক্ত করছে।
