সোমালিয়ার অভিবাসীদের ‘আবর্জনা’ বললেন ট্রাম্প, ‘পাল্টা জবাব না দেওয়াই ভালো’ বললেন সোমালি প্রধানমন্ত্রী
সম্প্রতি সোমালিয়ার অভিবাসীদের 'আবর্জনা' বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এমন বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের জবাবে সোমালিয়ার প্রধানমন্ত্রী হামজা আবদি বারে বলেছেন, এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোই ভালো।
গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেন। এর পরদিন বুধবার সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে একটি সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী হামজা আবদি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হামজা আবদি বলেছেন, 'ট্রাম্প যে কেবল আমাদের দেশকেই অপমান করেন, বিষয়টি এমন নয়। নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আরও অনেক দেশকে অপমান করেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উত্তর না দেওয়াটাই শ্রেয়।'
সোমালিয়ায় প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের বাস। সশস্ত্রগোষ্ঠী আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তারা দীর্ঘদিনের মিত্র মনে করে। বিদেশি সহায়তা কমালেও ২০২৫ অর্থবছরে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র সোমালিয়াকে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ ডলার সহায়তা দিয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, সোমালিয়ার অবস্থা খুব খারাপ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সোমালি অভিবাসীদের চান না। ট্রাম্প বলেন, 'আমরা যদি আমাদের দেশে আবর্জনা নেওয়া অব্যাহত রাখি, তবে আমরা ভুল পথে যাব।'
তবে ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের সরকারের নীরবতায় এবং কড়া প্রতিবাদ না জানানোয় ক্ষুব্ধ সোমালিয়ার সাধারণ মানুষ। মোগাদিসুর ব্যবসায়ী আবদুল্লাহি ওমর (৩৫) বলেন, 'নেতৃবৃন্দ ও রাজনীতিবিদদের উচিত দেশ ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। আমাদের জনগণের প্রতি ট্রাম্পের ঘৃণাবাচক বক্তব্যের বিষয়ে আপনারা কেন মুখে কুলুপ এঁটে আছেন?
যদিও আফ্রিকান দেশগুলো এবং বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গদের অপমান করার ইতিহাস ট্রাম্পের পুরোনো।
মোগাদিসুর ২৪ বছর বয়সী গ্রাফিক ডিজাইনার আলী ইয়াহিয়ে বলেন, 'আমরা আবর্জনা নই। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নে সেখানে বসবাসরত সোমালি কমিউনিটির অনেক অবদান রয়েছে।'
ইস্ট আফ্রিকান ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড গভর্নেন্সের নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার আবদিফাতাহ বশির ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে 'সরাসরি অপমান' বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি মনে করেন, সোমালি সরকার সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করবে না। কারণ, সোমালিয়া এখনো যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া আর্থিক সহায়তার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএআইডি (USAID)-এর কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ায় সোমালিয়ার মতো দরিদ্র দেশগুলোতে বিদেশি সহায়তা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ দেশটি চরম মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে ভয়াবহ খরায় সেখানে অন্তত ৪৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর ২০২৩ সালে দেশটি বন্যা ও অতিবৃষ্টির কবলে পড়ে।
আনোয়ার আবদিফাতাহ বশির বলেন, 'সরকার যদি চুপ করে থাকে, তবে পরোক্ষভাবে তারা ট্রাম্পের এই উগ্র ও অতিরঞ্জিত বক্তব্যকেই মেনে নিচ্ছে।'
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারজুড়েই এমন উগ্র ভাষা ব্যবহার করে আসছেন। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি হাইতি ও আফ্রিকান দেশগুলোকে অশালীন ভাষায় গালি দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, নরওয়ের মতো দেশগুলো থেকে কেন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী আসে না।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন ইস্যুটিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি অভিবাসীদের সঙ্গে অপরাধ ও রোগবালাইয়ের তুলনা টানছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, সোমালিরা মিনেসোটা 'দখল' করে নিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সোমালি গ্যাংগুলো 'শিকারের খোঁজে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে'।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তারা মূলত মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে বসতি গড়েন। গবেষণা সংস্থা মিনেসোটা কম্পাসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যটিতে প্রায় ৭৯ হাজার ৪০০ সোমালি বসবাস করছেন। তাদের অর্ধেকের বেশিই সোমালিয়ার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন।
অভিবাসনকর্মী ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, মিনেসোটায় বসবাসরত সোমালি বংশোদ্ভূতদের অধিকাংশই এখন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অথবা বৈধভাবে স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী)। মার্কিন আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্য বলছে, জাতীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সোমালি অভিবাসীদের প্রায় ৭৩ শতাংশই দেশটির নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
