কী এই ‘ফিফা শান্তি পুরস্কার’, কেন ট্রাম্প এটি পেতে পারেন?
আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসির জন এফ কেনেডি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র। বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর চোখ থাকবে টিভির পর্দায়। তবে আজকের আয়োজনে শুধু ড্র-ই থাকছে না, ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো তুলে দেবেন নতুন এবং কিছুটা কৌতূহলজাগানিয়া এক পুরস্কার। আর জোর গুঞ্জন রটেছে, প্রথমবার চালু হওয়া এই পুরস্কারটি পেতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ড্র শেষ হওয়ার পরপরই একই মঞ্চে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। ফিফার এই নতুন পুরস্কার ও ট্রাম্পকে জড়িয়ে গুঞ্জন নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
'ফিফা শান্তি পুরস্কার' কী?
গত নভেম্বরেই বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা জানিয়েছিল, এ বছর থেকে 'ফিফা পিস প্রাইজ' বা ফিফা শান্তি পুরস্কার চালু করা হচ্ছে। ফিফার ভাষ্যমতে, যারা শান্তির জন্য 'ব্যতিক্রমী ও অসাধারণ' কাজ করেছেন এবং এর মাধ্যমে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, তাদেরই প্রতিবছর এই সম্মাননা দেওয়া হবে।
ফিফা বলছে, বিশ্বজুড়ে ৫০০ কোটি ফুটবল ভক্তের পক্ষ থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে বিজয়ী নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি আসলে কী বা কিসের ভিত্তিতে বিজয়ী ঠিক করা হবে, তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। আর এখানেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে গুঞ্জন ডালপালা মেলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনিই হতে যাচ্ছেন এই পুরস্কারের প্রথম বিজয়ী।
কাকতালীয়ভাবে, নেতৃত্বের রদবদলের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন এই কেনেডি সেন্টারের বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো যে ট্রাম্পের বড় ভক্ত, তা আর গোপন কিছু নয়। আগামী বছরের বিশ্বকাপ সামনে রেখে দুজনের সম্পর্ক বেশ গভীর হয়েছে। ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে শর্ম আল-শেখের শান্তি সম্মেলন—নানা অনুষ্ঠানে দুজনকে একসঙ্গে দেখা গেছে।
এমনকি ইনফান্তিনো চেয়েছিলেন ট্রাম্প যেন নোবেল শান্তি পুরস্কার পান (যদিও শেষ পর্যন্ত তা পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো)। নোবেল ঘোষণার আগের দিন ইনস্টাগ্রামে ইনফান্তিনো লিখেছিলেন, ট্রাম্প 'নিশ্চিতভাবেই' এই পুরস্কারের যোগ্য।
নোবেল না জুটলেও ফিফা নিজেরাই এবার শান্তি পুরস্কার চালু করেছে। আর সেটি দেওয়া হচ্ছে খোদ ওয়াশিংটন ডিসিতে, হোয়াইট হাউস থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে। বিষয়টিকে কেবল কাকতালীয় ভাবার সুযোগ কম।
বিশ্বকাপের অন্য দুই আয়োজক দেশ মেক্সিকো ও কানাডার রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ট্রাম্পও আজকের ড্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। 'কালশি' নামের একটি প্রেডিকশন মার্কেট বা ভবিষ্যদ্বাণী সংস্থার তথ্যমতে, ট্রাম্পের এই পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা ৯১ শতাংশ।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বিগ্ন কেন?
রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে ইনফান্তিনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বেশি সখ্য গড়ছেন—এমন অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ 'ফেয়ারস্কয়ার' সিএনএন স্পোর্টসকে বলেছে, এই পুরস্কার চালুর বিষয়টি ফিফার 'গুরুতর অব্যবস্থাপনা'র সর্বশেষ উদাহরণ। সংস্থাটির সংস্কার যে জরুরি, এটি তারই প্রমাণ।
ফেয়ারস্কয়ারের পরিচালক নিক ম্যাকগিহান বলেন, 'জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ফিফাকে ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডার (ম্যাগা প্রজেক্ট) সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছেন। এটা হয়তো ফিফার জন্য সাময়িক বাণিজ্যিক লাভ আনবে, কিন্তু ফুটবলের সততা ও সুনামের জন্য তা হবে ভয়ানক ক্ষতিকর।'
অন্যদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) মিঙ্কি ওয়ার্ডেন গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুরস্কারটি দেওয়ার প্রক্রিয়া কী, তা জানতে তারা ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমরা কোনো উত্তর পাইনি। এর মানে ধরে নেওয়া যায়—নির্বাচনের কোনো প্রক্রিয়া নেই, অন্য কোনো মনোনয়ন নেই, এমনকি কোনো বিচারকও নেই।'
ফিফা কী বলছে?
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগের বিষয়ে ফিফা জানায়, বিশ্বকাপ আয়োজক দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ফিফা সভাপতির দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
ফিফা আরও জানায়, '২০২৬ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হিসেবে কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম ঘোষণার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্য দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে ফিফা সভাপতির জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলেই হোয়াইট হাউস টাস্কফোর্স গঠনসহ ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সম্ভব হয়েছে।'
সব ইঙ্গিত ট্রাম্পের দিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটি কে পাচ্ছেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সত্যিই যদি ট্রাম্পের হাতে এই পুরস্কার ওঠে, তবে আগামী বছরের বিশ্বকাপ ঘিরে ফিফা ও ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
