‘ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হলেও আরও কাজ বাকি আছে’: মার্কো রুবিও
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার চুক্তি নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তবে তিনি আরও জানান, "আরও অনেক কাজ এখনও বাকি আছে।" খবর বিবিসির।
ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব রুস্তেম উমেরোভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেন। রুস্তেম উমেরোভ ইউক্রেনের নতুন প্রধান আলোচক।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। উইটকফের আগামী সপ্তাহে আলোচনার জন্য মস্কো সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের শীর্ষ আলোচক আন্দ্রি ইয়েরমাকের বাড়িতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর তিনি পদত্যাগ করলে রুস্তেম উমেরভকে নতুন প্রধান আলোচক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
রোববারের এই বৈঠকটি হলো গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার সর্বশেষ ধাপ।
একটি ২৮-দফা মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর এর সূত্রপাত হয়। এই পরিকল্পনাটি রাশিয়াকে সুবিধা দেবে বলে মনে হওয়ায় প্রায় চার বছর আগে ইউক্রেনে আক্রমণকারী রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইরত ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা হতবাক হয়েছিল।
মায়ামির উত্তরে হল্যান্ডেল বিচের বৈঠকে রুবিও বলেন, "আলোচনা শুধু যুদ্ধ থামানোর শর্ত নিয়েই নয়।"
রুবিও আরও বলেন, 'এটি এমন শর্তাবলি নিয়েও আলোচনা করছে যা ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত করবে... আমি মনে করি আজকে আমরা সেই ভিত তৈরি করেছি, তবে আরও অনেক কাজ বাকি আছে।'
তিনি ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনকে "সার্বভৌম, স্বাধীন এবং সমৃদ্ধ" রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
রোববারের আলোচনা শুরু হওয়ার পর উমেরোভ বলেন, "আমরা ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ, ইউক্রেনের নিরাপত্তা, ইউক্রেনের ওপর আর কোনো আগ্রাসন না হওয়া, ইউক্রেনের সমৃদ্ধি এবং ইউক্রেনকে কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়—এই সব নিয়ে আলোচনা করছি।"
ইংরেজি ভাষায় কথা বলার সময় তিনি আরও বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কথা শুনছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সমর্থন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।"
পরে তিনি এই আলোচনাকে "ফলপ্রসূ ও সফল" বলে বর্ণনা করেন, অন্যদিকে রুবিও এটিকে "খুবই ফলপ্রসূ ও উপযোগী" বলে মন্তব্য করেন।
রোববার এয়ার ফোর্স ওয়ানে (প্রেসিডেন্টের বিমান) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, আলোচনা "ভালোভাবেই চলছে", এবং সংঘাত নিরসনে একটি চুক্তি হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি এই সপ্তাহে উইটকফ এবং সম্ভবত কুশনারকেও মস্কোতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে পাঠাবেন, যাতে বহুবার সংশোধিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'আলোচনায় একটি গঠনমূলক গতি থাকা এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করার স্পষ্ট সব লক্ষ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়াটা জরুরি।'
এসময় তিনি যুদ্ধ শেষ করার জন্য নেওয়া উদ্যোগের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তবে রাশিয়া যে সমস্ত ইউক্রেনীয় এলাকা দখল বা নিজ দেশের সঙ্গে যুক্ত করেছে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে—সেটিই এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত বিষয়।
ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে যে ফ্লোরিডার এই বৈঠক "সহজ ছিল না"।
সূত্রটি আরও বলে, "তবে সবাই গঠনমূলক হওয়ার এবং একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করছে।"
এদিকে ইউক্রেনের শক্তিশালী মিত্র ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে আলোচনার জন্য সোমবার প্যারিস যাচ্ছেন জেলেনস্কি।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া আক্রমণ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার বেসামরিক মানুষসহ হাজার হাজার সৈন্য নিহত বা আহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ৭০ লাখ মানুষ শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছেন।
এই দুই সাবেক সোভিয়েত দেশের সংঘাত ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়। সে সময় ইউক্রেনের রুশ-সমর্থক প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরানো হলে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয় এবং পূর্ব ইউক্রেনের সশস্ত্র বিদ্রোহে সমর্থন দেয়।
