বাড়িতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর পদত্যাগ জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার
বাড়িতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক পদত্যাগ করেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইয়ারমাক ছিলেন জেলেনস্কির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী উপদেষ্টা।
দেশের রাজনীতিতেও তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। যদিও ইয়ারমাকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে কোনো ভুল বা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি, তবুও কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা এক বড় দুর্নীতির কেলেঙ্কারির জেরে তিনি ক্রমশ চাপের মুখে ছিলেন।
জেলেনস্কি সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রধান হিসেবে ইয়ারমাককেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ইউক্রেনের রাজনীতিতে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন জেলেনস্কির অবস্থান দুর্বল হয়েছে, তেমনি একটি সংবেদনশীল মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির আলোচনার অবস্থানও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে দেশটির জ্বালানি খাতে প্রায় ১০ কোটি ডলারের তছরুপের অভিযোগে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম জড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প থেকে অর্থ সরানো হয়েছে। এটি নিয়ে ইউক্রেনীয় জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
ইউক্রেন ইইউ-তে যোগদানের জন্য প্রার্থী রাষ্ট্র হলেও, এই দুর্নীতি কেলেঙ্কারি পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইউক্রেনের 'দুর্নীতিবিরোধী কার্যসূচির প্রতি অঙ্গীকার' নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল।
শুক্রবার ভোরে ইউক্রেনের দুটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা রাজধানী কিইভের সরকারি কোয়ার্টারে ইয়ারমাকের অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায়।
৫৪ বছর বয়সী ইয়ারমাক স্বীকার করেন যে পদত্যাগের জন্য তার ওপর 'বিরাট' চাপ ছিল। তিনি বলেন, 'মামলাটি বেশ জটিল এবং এর জন্য রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া দরকার।'
নিজের ফ্ল্যাটে অভিযান শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও ইয়ারমাক ইউক্রেন সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি জানান, কোনো অঞ্চল ছাড় দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও ইউক্রেন অনড় থাকবে।
তিনি বলেন, 'যতদিন জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট থাকবেন, ততদিন আমাদের কাছ থেকে জমি ছেড়ে দেওয়ার আশা করা উচিত নয়। তিনি কোনোভাবেই কোনো অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না।'
এই ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট দপ্তর থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আমরা সবকিছু হারানোর ঝুঁকিতে আছি: নিজেদের, ইউক্রেন, আমাদের ভবিষ্যৎ।'
তিনি জানান, 'রাশিয়া চায় ইউক্রেন ভুল করুক – কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ভুল হবে না। আমাদের লড়াই চলছে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ করে পিছু হটার কোনো অধিকার আমাদের নেই।'
জেলেনস্কি তার ভাষণে ইয়ারমাকের প্রশংসা করে বলেন, 'আলোচনার পথে ইউক্রেনের অবস্থান যেভাবে উপস্থাপন করা প্রয়োজন ছিল, সেভাবে করার জন্য আমি আন্দ্রির কাছে কৃতজ্ঞ।' তিনি আরও জানান, শনিবার থেকেই ইয়ারমাকের উত্তরসূরি নিয়োগের জন্য তিনি আলোচনা শুরু করবেন।
ইতিমধ্যেই এই কেলেঙ্কারির জেরে জেলেনস্কি জ্বালানি মন্ত্রী ও বিচারমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ মানুষ ইয়ারমাকের পদত্যাগ চেয়েছিলেন।
