চেহারা বিশ্লেষণ করে কি চাকরির জন্য উপযুক্ত প্রার্থী নির্ধারণ সম্ভব?
ভাবুন তো, আপনি একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলেন এবং কোনো কথা বলার আগেই আপনাকে বলে দেওয়া হলো, এই চাকরিটি আপনার হচ্ছে না, কারণ আপনার চেহারাটা ঠিক যুতসই নয়। আপনি হয়তো একে সরাসরি বৈষম্য বলে ধরে নেবেন, এমনকি আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন।
কিন্তু কী হবে যদি এর কারণ পক্ষপাতিত্ব না হয়? কী হবে যদি চাকরি-প্রার্থীর চেহারাই কর্মক্ষেত্রে সম্ভাব্য দক্ষতার ব্যাপারে সত্যিই দরকারি কোনো ইঙ্গিত দেয়? পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিয়াস গুয়েঞ্জেল এবং তার সহ-লেখকদের সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রের মূল বিষয় এটাই। এই সম্ভাবনাই অ্যালগরিদম-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ন্যায্যতা সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে বড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিত্ব যাচাই করাটা একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। সাধারণত প্রার্থীদের বিভিন্ন জরিপে অংশ নিতে হয় এবং অনুমানের ওপর ভর করে সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়। কিন্তু পূর্ববর্তী গবেষণা বলছে, মানুষের ব্যক্তিত্বের ধরণ তার মুখের আদলের মধ্যেই থাকতে পারে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তা শনাক্ত করতে পারে। তাই মিস্টার গুয়েঞ্জেল এবং তার সহ-লেখকরা ৯৬,০০০ এমবিএ স্নাতকের ছবি বিশ্লেষণ করার জন্য একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করেছেন।
যা থেকে তারা 'ফটো বিগ ফাইভ' নামে একটি বিষয় বের করে এনেছেন— যা ব্যক্তিত্বের পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্য, যেমন: সহনশীলতা, সচেতনতা, সামাজিকতা, স্নায়বিক দুর্বলতা এবং উন্মুক্ততাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে। (তবে আয়নার সামনে দাঁড়ানোর আগে বলে রাখা ভালো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঠিক কী দেখছে, তা খালি চোখে স্পষ্ট নয়।)
এরপর তারা এই ব্যক্তিদের কর্মজীবনের তথ্য ব্যবহার করে দেখেছেন যে, 'ফটো বিগ ফাইভ'-এর কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা আছে কি না। তাদের গবেষণার উপসংহার হলো: হ্যাঁ, আছে। একজন ব্যক্তির এমবিএ-পরবর্তী আয় এবং চাকরি বদলের প্রবণতাসহ আরও অনেক বিষয়ে মুখের বিশ্লেষণ দরকারি তথ্য দিতে পারে।
তবে এর অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। 'ফটো বিগ ফাইভ'-এর ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতাকে অতিরঞ্জিত করা উচিত নয়; গবেষকরা বলছেন, এটি প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্যের একটি বাড়তি উৎস মাত্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মুখ বিশ্লেষণের এই ক্ষেত্রটি এখনও নতুন এবং অতীতে এটি পদ্ধতিগত বিতর্কের ঝড় তুলেছে। আর কৌশলগুলো যদি নিখুঁতও হয়, এর প্রচলন খুব ধীরে হবে। বৈষম্যবিরোধী আইনের কারণে মুখের বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট আইনি ঝুঁকি রয়েছে। এমআইটি স্লোন স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের মণীশ রাঘবন উল্লেখ করেছেন যে, সংস্থাগুলো মুখের বিশ্লেষণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে বেশ সতর্ক। (যদিও তিনি প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত বা লিঙ্কডইন প্রোফাইলের চ্যাটবট-সারাংশে পক্ষপাত ঢুকে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে বেশি চিন্তিত।)
কিন্তু ধরে নিন, এই সমস্ত আপত্তি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। যদি আপনার মুখ কোনো সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাকে আপনার সম্পর্কে দরকারি তথ্য দিতে পারে, এবং তা যদি সুরক্ষিত বৈশিষ্ট্যের (যেমন বর্ণ বা লিঙ্গ) ভিত্তিতে বৈষম্য না করে, তবে সংস্থাগুলো আপনার মুখ বিশ্লেষণ করতে প্রবলভাবে উৎসাহিত হবে। তবে তারপরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। গবেষকরা একটি উদাহরণ দিয়েছেন: "শ্বেতাঙ্গ পুরুষ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে, যাদের মুখ দেখে কম আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের পূর্বাভাস পাওয়া যায়, তাদের বাদ দেওয়া কি নৈতিকভাবে ঠিক?"
আপনি যুক্তি দিতে পারেন যে এতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, শারীরিক উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ইতোমধ্যেই অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চাকরির ক্ষেত্রে উচ্চতার একটি বাড়তি সুবিধা দেখা যায়, যেখানে একজন লম্বা ব্যক্তির চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেউ কেউ তর্ক করতে পারেন যে, যেসব প্রক্রিয়ায় শিক্ষাগত যোগ্যতাকে পুরস্কৃত করা হয়, তার চেয়ে মুখের বিশ্লেষণ বরং বেশি মেধাভিত্তিক। ইয়েল স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের কেলি শু, যিনি এই নতুন গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক, বলেছেন যে তারা এখন খতিয়ে দেখছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মুখের বিশ্লেষণ ঋণদাতাদের কোনো ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের প্রবণতা সম্পর্কে দরকারি তথ্য দিতে পারে কি না। যাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের জন্য এটা আশীর্বাদ হয়ে আসতে পারে।
তবে পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি বাদ দিলেও আরও বড় উদ্বেগ রয়েছে। কিছু উদ্বেগ সুস্পষ্ট: গড়পড়তা পরিসংখ্যান দিয়ে একজন ব্যক্তি কেমন কাজ করবে, তা বলা যায় না। অন্যগুলো আরও গভীর। কোচ এবং স্ব-সহায়তা গুরুদের একটি বিশাল শিল্প এই ধারণার ওপর নির্মিত যে, নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবর্তন করা সম্ভব। আপনি নিজেকে উন্নত করার জন্য যতই চেষ্টা করুন না কেন, আপনার মুখ যদি সেই একই ইঙ্গিত দেয় যে আপনি একজন অস্থিরচিত্ত মানুষ, তাহলে আত্ম-উন্নয়নের মানেটা কী দাঁড়ায়?
এই সম্ভাবনার প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ন্যায্যতা সম্পর্কে আপনার ধারণাকেও প্রকাশ করে। মানুষ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি ধরে রাখতে পারছে কি না, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালগরিদম যতই উন্নত হোক না কেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একজন মানব সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর মন জয় করার সুযোগ এবং একজন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারার সুযোগ যে তিনি কারও সাথে কাজ করতে চান কি না—এর মূল্য সম্ভবত সবসময়ই থাকবে।
মিস্টার রাঘবন যুক্তি দেন যে, অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া সিদ্ধান্ত মানুষ তখনই মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে, যখন এর পেছনে সুস্পষ্ট কার্যকারণ সম্পর্ক থাকে। যেমন, কম বয়সী চালকদের গাড়ির ইন্স্যুরেন্সের জন্য বেশি প্রিমিয়াম দেওয়া বা বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বেশি অর্থ প্রদানের পেছনে যুক্তিসঙ্গত পরিসংখ্যানগত কারণ রয়েছে। কিন্তু মুখের বিশ্লেষণ বহু মানুষের কপালেই ভাঁজ ফেলবে।
