এআই এর দাপটে যেভাবে গুরুত্ব হারাচ্ছে চাকরির কভার লেটার
চাকরির আবেদনের সঙ্গে একটা ভালো কভার লেটার থাকা খুবই জরুরি। এটি সিভির সঙ্গে চাকরির চাহিদার মেলবন্ধন ঘটায়। এর মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা বুঝতে পারেন কোন প্রার্থী যোগ্য। বিশেষ করে যাদের কাজের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন ধরনের, তাদের জন্য এটি বেশ কাজের।
আগে মনে করা হতো, কেউ কষ্ট করে কভার লেটার লিখলে তিনি চাকরিটি নিয়ে সত্যিই সিরিয়াস। তিনি শুধু বেতনের অঙ্ক লিখে সব কোম্পানিতে মেইল করছেন না, বরং সময় নিয়ে আবেদন করছেন।
কিন্তু দিন এখন বদলেছে। 'লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল' বা 'এআই' আসার পর সব হিসাব উল্টে গেছে। এখন চাকরিপ্রার্থীরা এক ক্লিকেই নিখুঁত কভার লেটার তৈরি করতে পারেন। চাকরির বিজ্ঞাপনে যা যা চাওয়া হয়েছে, তার সবই সেখানে সুন্দর করে লেখা থাকে। ফলে এখন যে কেউ নিজেকে খুব যত্নবান ও পরিশ্রমী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে পারেন। দিনে শত শত আবেদন করাও এখন কোনো ব্যাপার না।
ডার্টমাউথ কলেজ এবং প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির দুই গবেষক আনািস গালডিন ও জেস লিবের্ত এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তারা চাকরির ওয়েবসাইট 'ফ্রিল্যান্সার ডটকম'-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন এআই কীভাবে শ্রমবাজার বদলে দিচ্ছে।
চ্যাটজিপিটি আসার আগে এবং পরের তুলনা করলে দুটি বিষয় চোখে পড়ে।
প্রথমত, কভার লেটারের দৈর্ঘ্য বেড়েছে। এআই আসার আগে গড়ে একটি কভার লেটারে ৭৯টি শব্দ থাকত। ফ্রিল্যান্সার ডটকম-এ সাধারণত এধরনের ছোটখাটো কাজের জন্য লোক নেওয়া হতো। কিন্তু চ্যাটজিপিটি আসার কয়েক বছর পর এই গড় বেড়ে ১০৪ শব্দে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে সাইটটি নিজস্ব এআই টুল চালু করে। যারা এই টুল ব্যবহার করে লেটার লিখেছেন, তাদের লেখা আরও বড়—গড়ে ১৫৯ শব্দ। অর্থাৎ মানুষের হাতে লেখা সাধারণ লেটারের চেয়ে এটি দ্বিগুণ বড়।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, নিয়োগকর্তারা এখন আর কভার লেটারে কী লেখা আছে তা নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। আগে কিছু কভার লেটারে বিশেষ যত্ন দেখা যেত, যা থেকে ভালো কর্মী চেনা যেত। তাই তখন সব চিঠি মন দিয়ে পড়া হতো। কিন্তু এখন সব চিঠিতেই কৃত্রিম 'চেষ্টা' বা 'আবেগ' দেখা যায়। ফলে এগুলোর আলাদা কোনো গুরুত্ব আর নেই।
গবেষকরা এআই দিয়ে লেটারগুলোর মান যাচাই করেছেন। তারা দেখেছেন প্রার্থীরা চাকরির বিজ্ঞাপন ঠিকমতো পড়েছেন কি না বা তাদের ইংরেজি কতটা স্পষ্ট। এআই আসার আগে লেটারের গড় স্কোর ছিল ১৮-র মধ্যে ৩.৯। এআই আসার পর সেই স্কোর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
এর ফল খুব একটা ভালো হয়নি। এআই আসার আগে একটি ভালো প্রস্তাব বা কভার লেটার লিখলে কর্মীরা গড়ে বাড়তি ২৬ ডলার আয় করতে পারতেন। কিন্তু এআই আসার পর সেই বাড়তি আয়ের সুযোগ উধাও হয়ে গেছে।
গবেষকদের হিসাবে, বিভিন্ন জায়াগায় এখন কর্মীদের মজুরি ৫ শতাংশ কমে গেছে। নিয়োগের হারও কমেছে ১.৫ শতাংশ। নিয়োগকর্তারা এখন ভালো ও দুর্বল প্রার্থীর পার্থক্য বুঝতে পারছেন না। ফলে তারা সবার বেতন কমিয়ে দিচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য লোক নিয়োগ দিচ্ছেন। এতে হয়তো মালিকপক্ষের খরচ কমছে, কিন্তু গবেষকরা বলছেন, কোম্পানি যতটুকু লাভ করছে, তার চেয়ে কর্মীদের ক্ষতি হচ্ছে অনেক বেশি।
