গাজায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে আগ্রহী বহু দেশ: মার্কো রুবিও
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, গাজায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স–আইএসএফ) গঠনে 'অনেক দেশ' অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এতে অংশ নেওয়া দেশগুলো নিয়ে ইসরায়েলের স্বস্তি থাকতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। খবর বিবিসি'র।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ইসরায়েল সফরে থাকা রুবিও বলেন, 'আইএসএফ গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং এটি 'যত দ্রুত সম্ভব' কার্যকর করা হবে। তবে হামাসের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া এমন বাহিনী মোতায়েন কীভাবে সম্ভব হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।'
রুবিও বলেন, 'ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দুই সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতিতে "ঐতিহাসিক অগ্রগতি" হয়েছে। যদিও এর পথে উত্থান-পতন ও নানা জটিলতা থাকতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'কোনও বিকল্প পরিকল্পনা নেই। এটাই সেরা পরিকল্পনা, একমাত্র পরিকল্পনা; যা আমরা মনে করি সফল হতে পারে।'
রুবিওর ভাষায়, 'এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে "৭ অক্টোবরের মতো ঘটনা" আর কখনও না ঘটে এবং গাজা এমন জায়গায় পরিণত হয় যেখানে এমন কোনো গোষ্ঠী থাকবে না, যারা ইসরায়েল বা নিজেদের জনগণের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।'
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলার পর প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। পাল্টা অভিযানে ইসরায়েলি সেনা অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এই হিসাব জাতিসংঘও নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
রুবিও জানান, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, 'হামাস যদি নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তা চুক্তিভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রয়োজনে তা বলবৎ করতে হবে। হামাস গাজা শাসন করতে পারবে না, ভবিষ্যত শাসনেও তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না।'
রুবিওর সফরটি এমন এক সপ্তাহে হচ্ছে, যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইসরায়েল সফর করেছেন। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃঢ় অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কর্মকাণ্ড পরিকল্পনাটিকে ব্যাহত করতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন বলেও ধারণা দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে এ উদ্যোগকে 'বিবি-সিটিং' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, 'বিবি' নেতানিয়াহুর ডাকনাম।
সম্প্রতি, মার্কিন প্রশাসনের ইসরায়েল নিয়ে হতাশা প্রকাশ পেয়েছে; বিশেষত গাজায় হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রাণঘাতী পাল্টা হামলার পর এবং ভ্যান্সের সফরের সময় দখলকৃত পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব ইসরায়েলি সংসদে ভোটে যাওয়ায়।
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতিকে বিপন্ন করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ 'মেনে নেওয়া হবে না' এবং গাজায় যেকোনো হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই জানাতে হবে। পত্রিকাটি লিখেছে, 'বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন ইসরায়েলের কিছু নিরাপত্তা ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিচ্ছে।'
তবে প্রকাশ্যে নেতানিয়াহু এসব প্রতিবেদনের কথা অস্বীকার করেছেন। অতি-জাতীয়তাবাদী মন্ত্রিসভার ওপর নির্ভরশীল তার সরকার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক 'সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বের', কোনোভাবেই নির্ভরশীল নয়।
দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের চাপ, আন্তর্জাতিকভাবে অভূতপূর্ব একঘরে অবস্থান; এসব পরিস্থিতি নেতানিয়াহুর কৌশলকে হুমকির মুখে ফেলছে, যেখানে তিনি গাজার যুদ্ধকে 'জয়ের গল্প' হিসেবে তুলে ধরতে চান। ২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের প্রচারে এই ভাষ্য তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
রুবিও ও ভ্যান্স উভয়েই তাদের প্রকাশ্য বক্তব্যে ইতিবাচক সুর ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, 'যুদ্ধবিরতি টিকবে বলে তারা আশাবাদী'। যদিও স্বীকার করেছেন, অবশিষ্ট ইস্যুগুলোর সমাধান কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া হবে।
এই ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে: ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের মাত্রা, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন, আইএসএফ গঠন এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। তবে এসব আলোচনার দিকনির্দেশনা কেমন হবে, তা তারা স্পষ্ট করেননি।
রুবিও বলেন, 'অনেক দেশ' আইএসএফ গঠনে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি যোগ করেন, 'এ বাহিনী গঠনের সময় এমন দেশগুলোকেই যুক্ত করতে হবে, যাদের সঙ্গে ইসরায়েল স্বস্তি বোধ করে।' তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি, যদিও ধারণা করা হচ্ছে এটি তুরস্ককে ইঙ্গিত করছে। খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল তুরস্কের অংশগ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে।
আইএসএফের কার্যপরিধিও এখনো অস্পষ্ট, কারণ অনেক দেশ আশঙ্কা করছে, হামাসের সঙ্গে সমঝোতা না হলে বাহিনীটি সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে।
রুবিও বলেন, 'এ পথে হাঁটা সহজ হবে না। মাঝে মাঝে বাধা আসবে, উত্থান-পতন থাকবে; তবু আমাদের এটিকে সফল করতে হবে।'
