যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ার বিরল খনিজ সরবরাহ চুক্তি; তবে বাজারে চীনের আধিপত্য রুখতে এখনও দীর্ঘ পথ বাকি

সম্প্রতি বিশ্বের বিরল খনিজ বাজারে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে নতুন পদক্ষেপ হিসেবে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো বিরল খনিজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের সরবরাহ বাড়ানো।
তবে অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ খনিজ শিল্পে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন নতুন আর্থিক সহায়তার পথ দেখালেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন চীনের বাজার আধিপত্য ভাঙতে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলকে চীনের বাইরে নিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।
গেল সোমবার স্বাক্ষরিত এক বিস্তৃত চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পে সম্মিলিতভাবে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একই সঙ্গে, পশ্চিমা খনি কোম্পানিগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ অফটেক রাইটসসহ (উৎপাদিত পণ্য কেনার অধিকার) অন্যান্য আর্থিক সহায়তারও অনুমোদন দেবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় মার্কিন বিনিয়োগের ফলে ৫৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মজুত উন্মুক্ত হবে, যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।
ট্রাম্প অবশ্য বেশ আশাবাদী। তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যেই তাদের কাছে 'এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ থাকবে যে সামাল দিয়ে ওঠা যাবে না।' পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'এগুলোর মূল্য হবে প্রায় ২ ডলার'।
মঙ্গলবার সিডনিতে এক সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে খনিজ শিল্পের বিশেষজ্ঞরা এই খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এটি বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি করবে। তবে ট্রাম্পের 'এক বছরের' সময়সীমা নিয়ে তারা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ব্যারনজোয়ি-এর বিশ্লেষক ড্যান মরগান বলেন, 'বিরল খনিজ শিল্পে কোনো কিছুই দ্রুত ঘটে না। আমি মনে করি না, সরবরাহ বেড়ে বাজার হঠাৎ ভরে যাবে। অন্তত এক বছরের মধ্যে তো কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়। সরবরাহ বাড়তে পারে তবে তা হয়তো ৫–৭ বছর পর।'
বর্তমান বিশ্বে বিরল খনিজ পরিশোধনের ৯০ শতাংশ ক্ষমতা চীনের নিয়ন্ত্রণে। গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর সোমবারের এক নোটে বলা হয়েছে, চীন বৈশ্বিক বিরল মৃত্তিকা উত্তোলনের ৬৯ শতাংশ এবং ম্যাগনেট তৈরির ৯৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
চীন তুলনামূলকভাবে কম খরচে এই প্রযুক্তিগতভাবে কঠিন এবং পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকর পরিশোধন প্রক্রিয়ায় দক্ষতা অর্জন করেছে।
বাণিজ্যিক উত্তেজনা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা চীনের এই নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার চেষ্টা করছে। গত এপ্রিল ও মে মাসে বেইজিং বিরল মৃত্তিকার বিভিন্ন পণ্য ও সংশ্লিষ্ট ম্যাগনেটের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বৈশ্বিক গাড়ি নির্মাতাদের চাপে ফেলেছিল।
এই মাসের শুরুতে তারা তাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরও প্রসারিত করেছে। কয়েক বছর দুর্বল থাকার পর, সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রক্রিয়াজাত বিরল খনিজ এনডিপিআর অক্সাইডের বেঞ্চমার্ক মূল্য আগস্টে ৪০ শতাংশ বেড়ে প্রতি কিলোগ্রাম ৮৮ ডলারে পৌঁছেছিল।
যদিও পরে তা কমে ৭১ ডলারে নেমে এসেছে, তবে পশ্চিমা ডেভেলপাররা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সরকারকে উচ্চতর ফ্লোর প্রাইস বা ন্যূনতম মূল্য সমর্থনের আহ্বান জানাচ্ছে।
তবে এই ঘোষণার ফলে কিছু প্রতিষ্ঠান অবশ্য স্পষ্টতই লাভবান হয়েছে। ইউ.এস. এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অস্ট্রেলিয়ার খনি কোম্পানিগুলোতে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের সাতটি লেটার অফ ইন্টারেস্ট পাঠিয়েছে, যার মধ্যে আরাফুরা রেয়ার আর্থস অন্যতম।
অ্যারাফুরার প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা পিটার শেরিংটন বলেন, 'এটা আমাদের জন্য যেমন ভালো, তেমনি শিল্পের অন্য অংশীদারদের জন্যও। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এতে ইক্যুইটি বিনিয়োগের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।'
তবে ক্রেতাদের ক্রয়নীতিতে পরিবর্তন না এলে নতুন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ প্রকল্পগুলো টিকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাইরা রিসোর্সেসের প্রধান নির্বাহী শন ভার্নার। তিনি বলেন, 'যদি ক্রেতারা চীনের সর্বনিম্ন মূল্যের সরবরাহের প্রতি তাদের আসক্তি কাটাতে না পারেন, তাহলে বিশ্বের অন্য কোথাও নতুন প্রকল্পের কোনো প্রণোদনা থাকবে না।'