ট্রাম্পের এআই ভিডিও পোস্ট: ‘কিং ট্রাম্প’ জেটে চড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর বাদামি তরল নিক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার 'ট্রুথ সোশ্যাল' অ্যাকাউন্টে এআই-নির্মিত একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মাথায় মুকুট পরে 'কিং ট্রাম্প' লেখা একটি যুদ্ধবিমান চালাচ্ছেন এবং 'নো কিংস' লেখা ব্যানারের বিক্ষোভকারীদের ওপর বাদামি রঙের তরল ফেলছেন।
ভিডিওটি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ও সরকারি উভয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা হয়। এতে দেখা যায়, টাইমস স্কয়ারের ওপর দিয়ে ট্রাম্পের বিমান উড়ে যাচ্ছে এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর তরল বোমা ঢালছে। ব্যাকরাউন্ডে বাজছে কেনি লগিনসের জনপ্রিয় গান 'ডেঞ্জার জোন'।
'নো কিংস' নামে আয়োজিত বিক্ষোভটি যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আয়োজকদের দাবি অনুযায়ী প্রায় ৭০ লাখ মানুষ অংশ নেয়। এ কর্মসূচিকে নিয়ে রিপাবলিকানরা শুরু থেকেই অতিরঞ্জিত মন্তব্য, সমালোচনা এবং উপহাস করতে থাকেন।
কংগ্রেসের স্পিকার মাইক জনসনসহ রিপাবলিকান নেতারা এ বিক্ষোভকে আমেরিকাবিদ্বেষী হিসেবে অভিহিত করেন। পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি দাবি করেন, এসব বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা হামাসপন্থী অথবা অ্যান্টিফা (ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে) সংগঠনের এজেন্ট।
রিপাবলিকানদের মিত্ররা বিক্ষোভকারীদের ব্যঙ্গ করতে 'কিং' উপাধিকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের মুকুট পরা ছবি ও এআই ভিডিও প্রচার করেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স একটি এআই ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায়, ট্রাম্প মুকুট ও রাজকীয় পোশাক পরে আছেন, আর ন্যান্সি পেলোসি ও অন্যান্য ডেমোক্র্যাট নেতারা তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন।
এছাড়া ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ অ্যাকাউন্টগুলোতে আরও কয়েকটি ছবি প্রকাশিত হয়- এর মধ্যে ছিল টাইম ম্যাগাজিনের নকল প্রচ্ছদে মুকুট পরা ট্রাম্প এবং আরেকটি এআই ভিডিও, যেখানে তিনি লাল মখমলের চাদর গায়ে জড়িয়ে হোয়াইট হাউসের বারান্দা থেকে হাত নাড়ছেন।
আমেরিকান নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মতো সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন একাধিকবার নিয়েছে। যেমন, প্রতিবাদকারীদের আপত্তি সত্ত্বেও হোয়াইট হাউস পোর্টল্যান্ড ও শিকাগোর মতো শহরে ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের মোতায়েন করেছিল এবং সেই শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোরও উদ্যোগ নিয়েছিল।
সমালোচকেরা অভিযোগ করেছেন, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রশাসন অস্থিরতা উসকে দিতে চাইছে, যাতে বিদ্রোহ দমন আইনের প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়- যা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামরিকীকরণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
তবে 'নো কিংস' আন্দোলনের আয়োজকরা এ আশঙ্কা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন বলে জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অতীতেও এমন রাজনৈতিক ব্যঙ্গ ও সহিংস প্রতীক ব্যবহার করে বিতর্কিত পোস্ট করেছেন। গত সেপ্টেম্বরেও, যখন প্রশাসন শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ট্রাম্প এক এআই ছবি প্রকাশ করেন- যেখানে তিনি কাউবয় হ্যাট, সামরিক পোশাক ও সানগ্লাস পরে আছেন, পেছনে শিকাগোর আকাশে যুদ্ধবিমান উড়ছে আর শহর আগুনে জ্বলছে।
এই ধরনের অস্বাভাবিক ভিডিও এমন সময় পোস্ট করা হলো যখন দেশটির প্রশাসন বামপন্থী প্রতিবাদকারী সংগঠন, ভিসাধারী বিদেশি ও কিছু মতপ্রকাশের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে- ডানপন্থী কর্মী চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক সহিংসতা নাকি বামপন্থী বক্তব্য থেকেই উসকে দেওয়া হচ্ছে।