নোবেল না পেলেও গাজার 'শান্তি' উদযাপন করতে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প

মধ্যপ্রাচ্যে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরতে রোববার সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর এই সফরের মধ্য দিয়ে তিনি অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে আরও দৃঢ় করতে চান।
এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি ট্রাম্পের প্রকাশ্য প্রচারণা উপেক্ষা করে পুরস্কার দিয়েছে ভেনেজুয়েলার দক্ষিণপন্থী বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে। হোয়াইট হাউস এ সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়ে অভিযোগ করেছে, 'কমিটি শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছে।'
তবে মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের সফরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত অঞ্চলটির দেশগুলো। গাজায় যুদ্ধের অবসান ও ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তিতে ভূমিকার জন্য তিনি প্রশংসিত হবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন। প্রথমে তিনি ইসরায়েলে পৌঁছে সোমবার সেখানে ভাষণ দেবেন। এরপর মিশরে গিয়ে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই ইতোমধ্যে আলোচনায় ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি যেন স্বল্পমেয়াদি বিরতি না হয়ে দীর্ঘমেয়াদি শান্তিতে রূপ নেয়, তার জন্য ট্রাম্পকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নতুন করে হামলা চালানো থেকে বিরত রাখার জন্য চাপ দিতে হবে।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের অধ্যাপক মোহাম্মদ এলমাসরি বলেন, 'আমি মনে করি ট্রাম্প নিজে বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চান। তিনি নেতানিয়াহুকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চান—এখনই সময় যুদ্ধ থামানোর। অন্তত আমি তাই আশা করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্ভবত ট্রাম্প প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর প্রশংসা করবেন, যেমনটা তিনি সবসময় করেন। তবে আশা করি, এবার তিনি কার্যকরভাবে চাপ প্রয়োগ করবেন।'
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই বিধ্বংসী হামলা ও অবরোধের সমাপ্তিতে অন্যান্য কারণও ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘের তদন্তে এই অভিযানে গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আরব সেন্টারের ফিলিস্তিন–ইসরায়েল কর্মসূচির প্রধান ইউসুফ মুনাইয়ার আল জাজিরাকে বলেন, 'ইসরায়েল গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি ভবন ধ্বংস করেছে, কিন্তু বন্দিদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের অভিযানের ফল এখন ক্রমেই কমে আসছিল। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপও এই যুদ্ধবিরতির পেছনে ভূমিকা রেখেছে।'
এর আগে ট্রাম্পের মতোই বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব টেবিলে ছিল, কিন্তু নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এবার যখন বিশ্বের বহু দেশ—এমনকি ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররাও—গাজা অবরোধ ও কাতারে হামলার নিন্দা জানাচ্ছে, তখন এই যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হলো।
তবে আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন গাজার 'ক্ষুধা নীতির' নিন্দা না জানিয়ে বরং মানবিক সহায়তাকে সামরিকীকরণের মাধ্যমে 'জিএইচএফ' প্রকল্পে সমর্থন দিয়েছে, যাতে শত শত সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে।
এদিকে ট্রাম্প যখন মধ্যপ্রাচ্যে 'শান্তির' সাফল্য উদযাপন করছেন, তখন মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গাজায় গণহত্যার দায় নিরূপণ ও দখলদারিত্বের অবসান ছাড়া এই অঞ্চলে প্রকৃত শান্তি আসবে না।
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির প্রধান ন্যান্সি ওকেইল বলেন, 'গাজায় যা ঘটেছে, তার জবাবদিহি না হলে তা অন্য দেশগুলোর জন্যও এক ধরনের লাইসেন্স হয়ে যাবে। এতে আন্তর্জাতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে, যা সবার জন্যই হুমকির।'