ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করছেন ট্রাম্প: জেডি ভ্যান্স

ইউক্রেনকে দীর্ঘপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার অনুরোধ বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এ বিষয়ে জানান। তিনি বলেন, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির।
কিয়েভ (ইউক্রেনের রাজধানী) দীর্ঘদিন ধরে তাদের পশ্চিমা মিত্রদের কাছে এমন অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানিয়ে আসছে, যা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে রাশিয়ার বড় বড় শহরে আঘাত হানতে সক্ষম। ইউক্রেনের যুক্তি, এ ধরনের অস্ত্র পেলে তারা রাশিয়ার সামরিক শিল্পকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করতে পারবে এবং যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবে।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান হাভরিলিউক বলেন, 'যদি মস্কোর জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার খরচ খুব বেশি হয়ে যায়, তাহলে তারা বাধ্য হবে শান্তি আলোচনায় বসতে।'
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ভ্যান্সের মন্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, 'কিয়েভ সরকারের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে—এমন কোনো সর্বময় সমাধান (প্যানাসিয়া) নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'টমাহক হোক বা অন্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্র—এগুলো যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলাতে পারবে না।'
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (১ হাজার ৫০০ মাইল), যার অর্থ ইউক্রেনের নাগালে মস্কোও চলে আসবে।
রোববারের বক্তব্যে ইউক্রেনের টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের অনুরোধ নিয়ে জেডি ভ্যান্স দ্ব্যর্থক অবস্থান বজায় রাখেন—তিনি সরাসরি সমর্থন বা বিরোধিতা করেননি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগের বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো ইতোমধ্যেই রাশিয়ার গভীরে হামলার অনুমোদন দিয়েছেন।
ফক্স নিউজে এক প্রশ্নের জবাবে—ওয়াশিংটন কি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে দীর্ঘপাল্লার হামলার অনুমতি দিয়েছে কিনা—কেলগ বলেন, 'উত্তর হলো হ্যাঁ, গভীরে আঘাত হানার সক্ষমতা ব্যবহার করো, কোনো জায়গাই নিরাপদ আশ্রয় নয়।'
ভ্যান্স ও কেলগের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাম্প্রতিক সুরের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ—যা ইঙ্গিত দেয়, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান এখন কিছুটা কঠোর ও নমনীয় হয়েছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের টিকে থাকার সক্ষমতা নিয়ে বারবার সন্দেহ প্রকাশ করলেও, গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'কিয়েভ চাইলে এখনকার অবস্থা থেকে পুরো ইউক্রেনকে পুনরুদ্ধার করতে পারে'—যা তার অবস্থানের এক বড় পরিবর্তন। এই বক্তব্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও নাকি অবাক করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রকাশ্যে যুদ্ধ শেষ করার ইচ্ছা দেখালেও বাস্তবে ইউক্রেনের শহরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন—এ কারণে ট্রাম্প নাকি বিরক্ত।
রোববারের হামলায় রাশিয়া ১২ ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক আক্রমণ চালায়, যাতে শত শত ড্রোন ও প্রায় ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে কিয়েভে চারজন নিহত এবং অন্তত ৭০ জন আহত হন।
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান হাভরিলিউক বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া তাদের আকাশপথের হামলার তীব্রতা ও ধ্বংসযজ্ঞ আরও বাড়াবে।

বলিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে আকাশসীমা রক্ষায় কিয়েভ তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে অন্তত ১০টি 'প্যাট্রিয়ট সারফেস-টু-এয়ার' প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছে, যা আগত ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে ও প্রতিহত করতে সক্ষম।
গ্রীষ্মকালে ট্রাম্প যে প্যাট্রিয়ট সিস্টেম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলো কবে পাওয়া যাবে—এই প্রশ্নে ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান হাভরিলিউক বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বলেন, 'এই বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।'
রাশিয়া যত বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে, ইউক্রেনের পক্ষে সেগুলো প্রতিহত করা ততই কঠিন হয়ে পড়ছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মস্কো রেকর্ডসংখ্যক—৮০০-রও বেশি—ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় হামলা।
এ ধরনের বৃহৎ আকারের আক্রমণের সময় স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরোধের হার (ইন্টারসেপশন রেট) কমে যায়।
রোববারের হামলায় ব্যবহৃত শত শত ড্রোনের মধ্যে ৩১টি লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম হয়। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মতে, এর বেশিরভাগই ছিল আবাসিক ভবন ও বেসামরিক স্থাপনা—এর মধ্যে কিয়েভের একটি হৃদরোগ বিশেষায়িত হাসপাতালও রয়েছে।
উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান হাভরিলিউক বলেন, এই আকাশপথের হামলাগুলো এখন আরও ঘন ঘন, তীব্র ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, কারণ মস্কো এখন নতুন ও উন্নতমানের ড্রোন ব্যবহার করছে, যা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম।
ইভান হাভরিলিউক ব্যাখ্যা করেন, ২০২৩ সালে প্রথমবার ইরান নির্মিত শাহেদ ড্রোন ব্যবহার করা হলে সেগুলোকে ইউক্রেনের ইলেকট্রনিক যুদ্ধব্যবস্থার (ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম) মাধ্যমে সহজেই ব্যাহত করা যেত।
তিনি বলেন, 'আজ তারা ১৬-চ্যানেলের অ্যান্টেনা ব্যবহার করছে, যাতে আমাদের জ্যামিং অঞ্চলের ভেতর দিয়েও উড়ে যেতে পারে।'
হাভরিলিউক আরও মনে করেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা গেলে রুশ ড্রোনগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় পৌঁছানোর আগেই প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, 'আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা পুরো ইউরোপের নিরাপত্তায় এক ধরনের বিনিয়োগ,'—সম্প্রতি রুশ ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশের ঘটনা ইঙ্গিত করে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এটি 'ইউরোপকে ক্রমাগত ভয় দেখানোর পুতিনের পরিকল্পনা' ব্যাহত করবে।