নেতানিয়াহুকে ইসরায়েলের সঙ্গে পশ্চিম তীর যুক্ত করতে দেবেন না ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার অনুমতি দেবেন না। খবর বিবিসির।
শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের আগে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, 'আমি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর সংযুক্ত করতে দেব না... এটা হচ্ছে না।'
ট্রাম্প বলেন, তিনি সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া তিনি জানান, গাজা ইস্যুতে একটি চুক্তি 'প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে' রয়েছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধ ও পশ্চিম তীর দখল বন্ধের জন্য ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাপের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে যখন একের পর এক পশ্চিমা দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ইসরায়েলের ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর একটি অংশ পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণকে এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ঠেকানোর উপায় হিসেবে দেখছে।
নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের উগ্র জাতীয়তাবাদীরা আবারও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অংশ পশ্চিম তীরকে সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটেন ও জার্মানি জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলকে এ ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছে।
অন্যদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার জাতিসংঘে বলেন, পশ্চিম তীর সংযুক্ত করা হবে 'নৈতিক, আইনি ও রাজনৈতিকভাবে অসহনীয়' পদক্ষেপ।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি এ বিষয়ে নেতানিয়াহু ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন।
ট্রাম্প বলেন, 'আমরা গাজা ইস্যুতে একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, আর হয়ত শান্তিরও।'
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেন, সোমবার ফ্রান্স ঘোষিত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
৮৯ বছর বয়সী আব্বাসকে নিউইয়র্কে সরাসরি উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি যারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান মাহমুদ আব্বাস।
রোববার কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও পর্তুগালের মাধ্যমে যে স্বীকৃতির ঢেউ শুরু হয়, পরে তাতে যুক্ত হয় ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো, সান মারিনো, আন্দোরা ও ডেনমার্ক।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এ ধরনের পদক্ষেপ হামাসকে পুরস্কৃত করার সমান।
জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে মাহমুদ আব্বাস বলেন, 'হামাস ভবিষ্যতে কোনো সরকারের অংশ হবে না।'
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের প্রত্যাহারের পর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে গাজা উপত্যকার পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে এবং এর সঙ্গে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরও যুক্ত করতে হবে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা সতর্ক করেন, ইসরায়েল যদি পশ্চিম তীর যুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তার পরিণতি গুরুতর হবে।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পশ্চিম তীরে সংযুক্তীকরণের ঝুঁকি ও বিপদগুলো খুব ভালোভাবেই বোঝেন।'
বুধবার সকালে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর ও প্রতিবেশী জর্ডানের মধ্যে একমাত্র সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এর ফলে পশ্চিম তীরের দুই মিলিয়নের বেশি ফিলিস্তিনি বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ হারান।
কয়েক দিন আগে এই সীমান্ত পারাপারের কাছে এক জর্ডানিয়ান বন্দুকধারীর গুলিতে দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হন। পরে ওই বন্দুকধারীও ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এদিকে গাজায় বুধবার ইসরায়েলি হামলায় ৮০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের বেশিরভাগই গাজা শহরের বাসিন্দা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে চালানো হামলার জবাবে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মা করা হয়।
এর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৪১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে অঞ্চলটির হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে।
চলতি বছরের আগস্টে জাতিসংঘ-সমর্থিত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানায়, গাজার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ 'দুর্ভিক্ষ, নিঃস্বতা ও মৃত্যুর' মতো 'বিপর্যয়কর' পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার দাবি করেন, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ চলছে না।
জাতিসংঘের এক তদন্ত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনকে 'বিকৃত ও মিথ্যা' আখ্যা দিয়ে তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এরই মধ্যে যুদ্ধ ও দখলদারিত্ব বন্ধে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
আরও দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি, ইউরোপীয় কমিশন ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপ এবং দেশটির সরকারের উগ্রপন্থি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে গাজা যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় এটি হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে কঠোর অবস্থান।
এ সপ্তাহে মাইক্রোসফট ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ইউনিটের জন্য কিছু সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এক তদন্তে দেখা যায়, তাদের প্রযুক্তি গাজায় মানুষের ওপর গণ নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে এসব পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলকে আরও বেশি আত্মনির্ভর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।