ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান বদল: দেখছেন রাশিয়ার দখল করা ভূখণ্ড উদ্ধারের সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তার আগের অবস্থানের বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন এখন এমন অবস্থানে আছে যেখানে তারা রাশিয়ার দখলে থাকা সব ভূখণ্ডই ফেরত নিতে সক্ষম।
এটি তার পূর্ববর্তী অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। এতদিন তিনি মনে করতেন, যুদ্ধ শেষ করতে হলে কিয়েভকে মস্কোর কাছে কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হবে—যেমন ক্রিমিয়া, যেটি রাশিয়া ২০১৪ সালে দখল করে নেয়।
কিন্তু এবার ট্রাম্প বলেছেন, "ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি বুঝে নেওয়ার পর" তার বিশ্বাস, ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সমর্থন নিয়ে হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
"কেন নয়?"—জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প লিখেছেন। তিনি এমনকি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেন হয়তো "তার চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করতে পারে!"
রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্পের দোদুল্যমানতা
ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তন তার দীর্ঘদিনের দ্বিধাগ্রস্ত কূটনীতির সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত। তিনি কখনো রাশিয়ার প্রতি নরম, কখনো ক্ষুব্ধ, আবার কখনো পরোক্ষ হুমকি দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে ট্রাম্প বলেছিলেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই দ্রুত সমাধান এনে দেবে।
কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুতিনকে ঘিরে ট্রাম্পের হতাশা বেড়েছে। গত জুলাইয়ে ন্যাটো মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে তিনি পুতিনের সমালোচনা করেন, এবং ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দেন।
গত মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধ থামানোর জন্য ট্রাম্প 'ভূমি বিনিময়'-এর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও জেলেনস্কি সে ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, "বর্তমান ফ্রন্টলাইন আমলে নিয়েই দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য ভূমি বিনিময়" নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
কিন্তু আলাস্কার আলোচনার পর থেকে কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দেননি। উল্টো রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা বাড়িয়েছে এবং ন্যাটোর আকাশসীমায় তাদের বিমান প্রবেশের ঘটনা বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প বলেন, ন্যাটো সদস্যদের উচিত রাশিয়ার বিমান ভূপাতিত করা। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন, "হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়।" তবে ন্যাটো মিত্ররা এমন পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা করবে কিনা—এই প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, "পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে, তবে ন্যাটোর প্রতি আমাদের অবস্থান খুব শক্ত।"
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প রাশিয়াকে "কাগুজে বাঘ" বলে আখ্যা দেন। তার দাবি, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে রাশিয়ার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাবে। "সবার জন্য শুভকামনা!"—লিখেছেন তিনি।
জ্বালানি ও নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ
যদিও এখন পর্যন্ত ট্রাম্প কঠোর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে নন। তার বক্তব্য, ইউরোপীয় নেতাদের আগে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি রাশিয়ার প্রধান ক্রেতা যেমন চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করতে হবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মঙ্গলবার দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প ন্যাটো দেশগুলোর রাশিয়ার জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "ভাবুন তো—তারা নিজেদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধের অর্থ জোগাচ্ছে। এমন অদ্ভুত ব্যাপার আগে কেউ শুনেছে?"
জাতিসংঘে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেখতে চান। একইসঙ্গে তিনি ট্রাম্পের রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধের আহ্বানকে সমর্থন করেন।
জেলেনস্কি জানান, তিনি স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি রুশ জ্বালানি আমদানি বন্ধে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে হাঙ্গেরি নিয়ে তিনি সন্দিহান। "আমি নিশ্চিত নই হাঙ্গেরিয়রা প্রস্তুত কি-না," বলেন তিনি। ট্রাম্প এ প্রসঙ্গে যোগ করেন, তিনি এখনো হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সঙ্গে কথা বলেননি। "আমার মনে হয়, যদি কথা বলতাম, তবে হয়তো তিনিও (রুশ জ্বালানি আমদানি) বন্ধ করতেন," বলেন ট্রাম্প।
