ইসরায়েলের সমালোচনায় শতবর্ষী মাহাথির, চীনকে ভাবছেন ‘বিশ্বসেরা’, জানালেন নিজের দীর্ঘায়ুর রহস্যও

এ বছরের শুরুতে শতবর্ষ পূর্ণ করেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তবে বয়স তার তীক্ষ্ণতা ও স্পষ্টভাষিতায় এতটুকুও প্রভাব ফেলেনি। শততম জন্মদিনের পর আল-জাজিরাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন, চীনের উত্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
তার মতে, গাজায় চালানো গণহত্যা বিশ্ব 'শত বছরেও' ভুলবে না এবং আগামী এক দশকের মধ্যেই চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের এক নম্বর দেশে পরিণত হবে।
দীর্ঘায়ুর রহস্য হিসেবে মাহাথির তার চিরচেনা কর্মঠ জীবনের কথাই উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'মূল বিষয় হলো আমি সব সময় কাজ করি। বিশ্রাম নিই না। মন ও শরীরকে সক্রিয় রাখুন, তাহলে দীর্ঘজীবী হবেন।' ১০০ বছর বয়সেও তিনি পুত্রজায়ার নিয়মিত কাজ করেন, সাহায্য ছাড়া হাঁটেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকেন।
গাজা পরিস্থিতি 'ভুলে যাওয়ার মতো নয়'
সাক্ষাৎকারে মাহাথির গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে 'ভয়াবহ গণহত্যা' বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, 'তারা গর্ভবতী মা, সদ্যোজাত শিশু, তরুণ-তরুণী—সবাইকে হত্যা করেছে। এটা কীভাবে ভোলা সম্ভব?' তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে বসনিয়ার যুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের চালানো গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেন।
মাহাথির বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম, যারা নিজেরা গণহত্যার শিকার হয়েছে, তারা অন্যদের ওপর এমনটা করতে চাইবে না।' কিন্তু ইসরায়েলের ক্ষেত্রে তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার মতে, এই সংঘাতের একমাত্র সমাধান দ্বি-রাষ্ট্র নীতি, তবে তিনি তার জীবদ্দশায় তা দেখে যেতে পারবেন না বলে মনে করেন।
'১০ বছরেই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে চীন'
বিশ্ব রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে মাহাথির বলেন, চীনের উত্থান অবশ্যম্ভাবী। তিনি ১৯৭০-এর দশকে তাঁর চীন সফরের স্মৃতিচারণা করে বলেন, তখন দেশটি ছিল 'খুবই গরিব'। কিন্তু আজ বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, কর্মঠ ও মেধাবী জনগোষ্ঠীর কারণে চীন অর্থনীতিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, 'যুক্তরাষ্ট্রকে ধরতে চীনের ১০ বছর লাগবে। এরপর চীন আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে।'
এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'শুল্ক যুদ্ধ' এবং উৎপাদন শিল্প যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনাকে 'ক্ষতিকর' বলে আখ্যা দেন তিনি।
মাহাথিরের মতে, 'আমেরিকায় মজুরি অনেক বেশি। সেখানকার কর্মীরা চীনাদের মতো ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করতে পারে না। ফলে সেখানে উৎপাদিত পণ্যের দাম অনেক বেশি হবে এবং আমেরিকা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না।'
আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার
তিনবার হার্ট অ্যাটাক থেকে বেঁচে ফেরা এবং ৯০ বছর বয়সের পর মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে অভাবনীয়ভাবে প্রত্যাবর্তন করা মাহাথির মোহাম্মদ মোট ২৪ বছর দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি মালয়েশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নেতা হিসেবে সম্ভবত এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী খেতাব অর্জন করেছেন।
পেশায় একজন চিকিৎসক মাহাথিরের সমালোচকরাও স্বীকার করেন যে, তার নেতৃত্বেই ১৯৬০-এর দশকের কৃষিভিত্তিক মালয়েশিয়া আজকের আধুনিক শিল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত হয়। ৯২ বছর বয়সে রাজনীতিতে ফিরে এসে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নেতা হিসেবেও ইতিহাস গড়েন তিনি।
জীবনের শততম বছরে এসে দীর্ঘায়ুর রহস্য জানাতে গিয়ে তিনি তার মায়ের দেওয়া উপদেশের কথা স্মরণ করেন, 'যখন খাবারের স্বাদ ভালো লাগে, তখনই খাওয়া থামিয়ে দাও।'