পোল্যান্ডের পর এবার রাশিয়ান ড্রোন অনুপ্রবেশের অভিযোগ রোমানিয়ার

রোমানিয়ার আকাশসীমায় একটি রাশিয়ান ড্রোন অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। পোল্যান্ডের পর এবার ন্যাটো সামরিক জোটের দ্বিতীয় সদস্য দেশে রাশিয়ান ড্রোনের এমন অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটল। খবর বিবিসির।
গতকাল শনিবার ইউক্রেনে রুশ হামলা পর্যবেক্ষণে রোমানিয়ার যুদ্ধবিমান টহলে ছিল। সে সময় ইউক্রেনের দক্ষিণ সীমান্ত ঘেঁষে ড্রোনটি শনাক্ত করা হয় বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এটি কোনো ভুল হতে পারে না; বরং রাশিয়ার যুদ্ধকে "স্পষ্টতই সম্প্রসারণ" করার পদক্ষেপ। তবে মস্কো এখনো রোমানিয়ার অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এর আগে বুধবার পোল্যান্ড অন্তত তিনটি রুশ ড্রোন ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছিল, যেগুলো তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল।
রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, দানিয়ুব নদীর কাছে ইউক্রেনীয় অবকাঠামোতে রুশ আক্রমণের পর সীমান্তে দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান টহল দিচ্ছিল। তখনই রুশ ড্রোনটি শনাক্ত করা হয়। চিলিয়া ভেচে গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এটি রাডারে ধরা পড়ে, এরপর হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। মন্ত্রণালয় বলেছে, ড্রোনটি জনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে উড়েনি এবং তাৎক্ষণিক কোনো ঝুঁকিও তৈরি করেনি।
পোল্যান্ডে সর্বোচ্চ সতর্কতা
শনিবার পোল্যান্ডও রুশ ড্রোন নিয়ে উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক অনলাইন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে জানান, আমাদের আকাশসীমায় পোলান্ডের সাথে মিত্র বিমানবাহিনীর প্রতিরোধমূলক অভিযান শুরু হয়েছে।" তিনি আরও জানান, "স্থলভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রাখা হয়েছে।"
গত সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছিল, তারা পোল্যান্ডের ভেতরে কোনো স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করার পরিকল্পনা করেনি।
অন্যদিকে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ জানিয়েছে, বুধবার পোল্যান্ডের আকাশসীমায় "দুর্ঘটনাবশত" ড্রোনগুলো প্রবেশ করে—তাদের নেভিগেশন সিস্টেম জ্যাম হয়ে গিয়েছিল।
এমতাবস্থায় আজ রোববার চেক প্রজাতন্ত্র জানায়, তারা পোল্যান্ডে একটি বিশেষ হেলিকপ্টার ইউনিট পাঠিয়েছে। এতে রয়েছে তিনটি এমআই-১৭১এস হেলিকপ্টার, প্রতিটি সর্বোচ্চ ২৪ জন সেনা বহনে সক্ষম এবং পূর্ণ যুদ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত। রাশিয়ার ন্যাটোর পূর্বপ্রান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ানা সারনোখোভা।
জেলেনস্কির হুঁশিয়ারি ও পশ্চিমা চাপের দাবি
সর্বশেষ এই অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, রুশ সেনারা "খুব ভালোভাবেই জানে তাদের ড্রোন কোথায় যাচ্ছে এবং কতক্ষণ আকাশে থাকতে পারবে।"
তিনি বারবার পশ্চিমা দেশগুলোকে মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে তিনি "প্রস্তুত", তবে শর্ত হচ্ছে—ন্যাটো দেশগুলোকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে হবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন চালায়। এর পর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে ধীরগতিতে হলেও অগ্রসর হচ্ছে মস্কো।
যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তবে গত মাসে আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক শেষে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলা আরও জোরদার করেছেন।