নেপালে ‘জেন-জি’দের শান্ত করার দায়িত্বে অশোক রাজ সিগদেল―কে এই সেনাপ্রধান?

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর দ্বিতীয় দিনেও দেশটিতে সহিংসতা চলমান। এ সহিংসতা বন্ধে নেপালের সেনাবাহিনী জনগণ ও বিক্ষোভকারীদের প্রতি শান্ত থাকার এবং ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।
নেপালের সেনাবাহিনী বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল যে তারা মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
তারা আরও জানায়, কিছু গোষ্ঠী এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও সরকারি স্থাপনার গুরুত্বর ক্ষতি করছে। এসময় তারা জনগণের সহযোগিতার আহ্বান জানান।
নেপালের সেনা প্রধান অশোক রাজ সিগদেলও বিক্ষোভকারীদের সংলাপে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল বলেন, 'বিক্ষোভকারী গোষ্ঠীর কাছে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি, বিক্ষোভ স্থগিত করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সংলাপে এগিয়ে আসুন।'
সেনাপ্রধান আরও বলেন, 'আমাদের বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে এবং আমাদের ঐতিহাসিক ও জাতীয় ঐতিহ্য এবং জনসাধারণের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে এবং সাধারণ জনগণ এবং কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।'
অবশ্য কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, সিগদেলই ওলিকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন।
কে এই সেনাপ্রধান?
জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭ সালে রুপন্দেহিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি নেপালের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৮৭ সালে কমিশন পান। সিগদেল চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি নেপাল, চীন ও ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর ভারতের ডিফেন্স ম্যানেজমেন্ট কোর্সও করেছেন
তিনি ইন্সপেক্টর জেনারেল, মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া ব্যাটালিয়ন, ব্রিগেড ও ডিভিশনের কমান্ডারও ছিলেন। সিগদেল জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে যুগোস্লাভিয়া, তাজিকিস্তান এবং লাইবেরিয়ায়ও কাজ করেছেন।
তিনি ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাওডেলের নেতৃত্বে নেপালের সেনাবাহিনীর ৪৫তম চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে, ডিসেম্বর ২০২৪ সালে ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর আনুষ্ঠানিক সফরের সময় তাকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্মানসূচক জেনারেল পদক প্রদান করা হয়।
নেপালে সহিংসতা
প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগের পরও মঙ্গলবার নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতা অব্যাহত ছিল। আন্দোলনকারীদের মধ্যে তার পদত্যাগের কোনো প্রভাব ছিল না। তারা এসময় নেপালের সংসদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় এবং উচ্চ পদস্থ নেতাদের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
সোমবার দুর্নীতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জেন-জি বা তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভের সময় পুলিশের হামলায় কমপক্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এতে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। বিক্ষোভকারীরা এসময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগের দাবিতে তার কার্যালয়ে প্রবেশ করলে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এদিকে সোমবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।