নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির স্বামী ১৯৭৩ সালে উড়োজাহাজ ছিনতাই করেছিলেন

ব্যাপক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করার কয়েকদিন পর নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী নেপালের প্রথম এই নারী প্রধান বিচারপতির নাম বুধবার জেন জি আন্দোলনের এক বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারের জন্য সুশীলা কার্কি খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন। নেপালের প্রথম এই নারী প্রধানমন্ত্রী পড়াশোনা করেছেন ভারতের বারাণসীর বানারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে। ভারতে পড়াশোনার সময়ই স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদির সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
কার্কির স্বামী সুবেদি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় আগে একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন নেপালি কংগ্রেসের যুবনেতা সুবেদি ১৯৭৩ সালের ১০ জুন আরও দুজনকে সঙ্গে নিয়ে বিমানটি ছিনতাই করেন।
১৯৭৩ সালের বিমান ছিনতাইয়ের আদ্যোপান্ত
১৯৭৩ সালের ১০ জুন বিরাটনগর থেকে ১৫ জন যাত্রী নিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাত্রা করা রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের বিমানটির ছিনতাই ছিল নেপালের ইতিহাসে প্রথম উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিমানটিতে বিখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী মালা সিনহাও ছিলেন।
রাজা মহেন্দ্রের অধীনে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে 'সশস্ত্র সংগ্রামের' জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নগেন্দ্র ধুঙ্গেল ও বসন্ত ভট্টরাইকে নিয়ে বিমানটি ছিনতাই করেন সুবেদি।
এই ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল রাজা মহেন্দ্রের নেতৃত্বাধীন রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের অর্থ সংগ্রহ করা।
অভিযোগ রয়েছে, এই ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনা করেছিলেন গিরিজা প্রসাদ কৈরালা, যিনি পরে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
সুবেদি তার আত্মজীবনী 'বিমান বিদ্রোহ' বইয়ে এই ছিনতাইয়ের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি নেপালি কংগ্রেসের ইতিহাস ও দেশের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়েও আলোচনা করেছেন।
কীভাবে বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছিল?
১৯৭৩ সালের দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি ভারত সীমান্তের ওপার থেকে টুইন-ইঞ্জিন বিমানটি ছিনতাই করে প্রায় ৪ লাখ ডলার নিয়ে পালিয়ে যান।
নিউইয়র্ক টাইমস একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানায়, 'ওই ব্যক্তিরা যাত্রী হিসেবে বিমানে উঠেছিলেন। বিমানটি উড্ডয়নের পর তারা পাইলটকে বন্দুক দেখিয়ে বলে, তারা ফোর্বসগঞ্জে যেতে চান।'
ছিনতাইকারীরা মাঝপথে পাইলটকে বিহারের ফোর্বসগঞ্জ এলাকায় বিমানটি অবতরণ করতে বাধ্য করে। সেখানে তাদের আরও পাঁচজন সহযোগী অপেক্ষা করছিলেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, 'দূতাবাসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ছিনতাইকারীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয়নি। তিনি বলেন, এই দস্যুতা সম্ভবত এমন কিছু নেপালি নাগরিকের কাজ, যারা টাকার বিষয়ে জানতেন।'
রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, যারা অর্থের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাদের মধ্যে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাও ছিলেন। এই ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কারণে তাকে তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছিল।
মানি কন্ট্রোলের তথ্যানুসারে, এরপর বিমানটি বাকি যাত্রীদের নিয়ে অক্ষত অবস্থায় ফের উড্ডয়ন করে এবং টাকা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকার পর এক বছরের মধ্যেই দুঙ্গেল ছাড়া দলের বাকি সবাই একে একে গ্রেপ্তার হন। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান এবং ১৯৮০ সালের গণভোটের কিছু আগে নেপালে ফিরে আসেন।