ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট অবশ্যই পুনর্বহাল করতে হবে, দাবি নেপালের রাজনৈতিক দলগুলোর

নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো দেশটির প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেলকে ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি, প্রাণঘাতী দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পর প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। খবর বিবিসি'র।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল, মাওবাদী সেন্টারসহ আটটি রাজনৈতিক দল জানায়, প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির সুপারিশে প্রতিনিধি সভা ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট পৌডেল। আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবির মধ্যে এটি ছিল একটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার জেরে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এই সপ্তাহে দাঙ্গা দমনে পুলিশি সহিংসতায় অন্তত ৫০ জন নিহত হন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতার পর অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত সোমবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও এরই মধ্যে বিক্ষোভ দেশব্যাপী আন্দোলনে রূপ নেয়। ক্ষুব্ধ জনতা মঙ্গলবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে পার্লামেন্ট ভবন ও সরকারি দপ্তরে অগ্নিসংযোগ করে। এর পর পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি।
আটটি দলের প্রধান হুইপদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক।
পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া ছিল তথাকথিত 'জেন জি' আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের অন্যতম দাবি। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, আগামী ৫ মার্চ ঘোষিত নতুন নির্বাচনের মতো আন্দোলনকারীদের দাবি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মোকাবিলা করা উচিত।
তবে, এ বিষয়ে এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেননি প্রেসিডেন্ট পৌডেল।
৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে শপথ নেন। নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভা গঠন করবেন বলে জানা গেছে। দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির অধিকারী কার্কির নেতৃত্বকে 'জেন জি' আন্দোলনের ছাত্রনেতারাও সমর্থন দিয়েছেন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, ভাঙচুর হওয়া পার্লামেন্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবন পুনর্নির্মাণ, পরিবর্তন প্রত্যাশী তরুণ আন্দোলনকারীদের আস্থা অর্জন এবং নেপালের গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দেওয়া। সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করাও সরকারের অন্যতম বড় কাজ হবে।
দীর্ঘ কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে নেপাল। কার্কি শপথ নেওয়ার পর রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় টহলরত সেনারা ব্যারাকে ফিরে গেছে।
গত সপ্তাহে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তই বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটায়। এর মধ্যে ছিল হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকও।
আন্দোলন শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'নেপো কিড' আন্দোলন তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এতে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবনধারা ও দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। যদিও সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, তবে ততক্ষণে আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য গতি পেয়ে যায়।