'অশনিসংকেত': যুক্তরাষ্ট্রে শখের বশে বই পড়ার অভ্যাস কমেছে ৪০ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রে শখের বশে পড়ার অভ্যাস কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। গত দুই দশকে এই হার প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, এমনই তথ্য উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকদের চালানো এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ বা পড়াশোনার বাইরে নিছক আনন্দের জন্য প্রতিদিন বই বা অন্যান্য কিছু পড়ার হার বছরে প্রায় ৩ শতাংশ করে কমেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৪ সালে এই হার ছিল সর্বোচ্চ, ২৮ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ সালে তা কমে মাত্র ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
'আমেরিকান টাইম ইউজ সার্ভে'-তে অংশগ্রহণকারী ২ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি মার্কিন নাগরিকের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। গবেষণাটি বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল 'আইসায়েন্স'-এ প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই সমীক্ষায় 'পড়া' বলতে কেবল বই পড়াকেই বোঝানো হয়নি; ছাপা বা ডিজিটাল মাধ্যমে ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র এমনকি অডিও সংস্করণও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই পতনকে 'গভীর উদ্বেগের বিষয়' বলে অভিহিত করে গবেষণাটির সহ-লেখক জিল সোনকে বলেন, 'সৃজনশীলতা বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য পড়ার অভ্যাস সব সময়ই একটি সহজ ও কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। যখন আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষার এমন একটি সহজ হাতিয়ার হারিয়ে ফেলি, তখন তা নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের ক্ষতি।'
সমীক্ষায় দেখা গেছে, যদিও সব গোষ্ঠীর মধ্যেই পাঠাভ্যাস কমেছে, তবে কয়েকটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে এই হ্রাসের হার অনেক বেশি। এর মধ্যে রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান, স্বল্প আয়ের বা কম শিক্ষিত মানুষ এবং গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা। তবে আনন্দের জন্য বই পড়ার অভ্যাস এখনো পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে বেশি।
তবে গবেষণায় একটি বিপরীত চিত্রও উঠে এসেছে। দেখা গেছে, যারা এখনো আনন্দের জন্য পড়েন, তারা বরং আগের চেয়ে আরও বেশি সময় ধরেই পড়ছেন। এ ছাড়া, সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বই পড়ার অভ্যাসে কোনো পরিবর্তন আসেনি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পরিসংখ্যানের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জিল সোনকে বলেন, 'আমাদের ডিজিটাল সংস্কৃতি নিঃসন্দেহে এর একটি বড় কারণ। তবে এর পাশাপাশি কিছু কাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে। যেমন বই পাওয়ার সীমিত সুযোগ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা এবং অবসর সময়ের ঘাটতি।'
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছর ধরে টানা পতনের পর ছাপা বইয়ের বিক্রি সামান্য বেড়েছিল। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা ফিকশন, যার মধ্যে ক্রিস্টিন হ্যার 'দ্য উইমেন' উপন্যাসটি ছিল বিক্রির শীর্ষে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৯ শতাংশ বলে ধারণা করা হয়। বৈশ্বিক তালিকায় দেশটির অবস্থান ৩৬তম।