ট্রাম্পের কড়াকড়িতে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে ১০ লাখেরও বেশি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী জনসংখ্যা গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়ছিল। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এক বছরেরও কম সময়ে অভিবাসী সংখ্যা এক মিলিয়নের বেশি কমেছে। ট্রাম্প অভিবাসনকে দেশের শক্তি নয়, বরং হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীর সংখ্যা ৫ কোটি ৩৩ লাখ ছিল। তবে জুন নাগাদ সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫ কোটি ১৯ লাখে।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার মধ্যে জুনে অভিবাসীর হার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশে, যা জানুয়ারির ১৫ দশমিক ৮ শতাংশের তুলনায় কম।
পিউ-এর জরিপে আরও জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার অভিবাসী শ্রমিক বেরিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির মোট শ্রমশক্তির ১৯ শতাংশই বিদেশে জন্ম নেওয়া কর্মী।
কেন্দ্রটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসী জনসংখ্যায় প্রভাব ফেলেছে এমন বেশ কয়েকটি নীতি পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালে জো বাইডেনের আশ্রয় আবেদন সীমিত করার সিদ্ধান্ত, যার ফলে আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের সীমান্ত অতিক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
এছাড়া কেন্দ্রটি জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসনকে লক্ষ্য করে ১৮১টি নির্বাহী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে নতুন অভিবাসীদের আগমন সীমিত করা এবং অ-নাগরিক অভিবাসীদের গণ বহিষ্কারও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কেন্দ্রটি জানিয়েছে, জরিপে অভিবাসীদের সাড়া দেওয়ার হার কমে যাওয়াও তথ্যের এই পরিবর্তনের একটি কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের মধ্যে মেক্সিকো এখনও সবচেয়ে বড় উৎস দেশ। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণ করেছেন। এটি দেশটির মোট অভিবাসীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা ২২ শতাংশ।
তবে ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকো থেকে অভিবাসন কমছে এবং দেশটিতে জন্ম নেওয়া অভিবাসীদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। পিউ-এর গবেষণা অনুযায়ী, ২০১০ সালে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভিবাসীর ২৯ শতাংশ ছিলেন মেক্সিকোতে জন্ম নেওয়া, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশে।
মেক্সিকোর পর যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠী এসেছে ভারত থেকে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটিতে ভারতের প্রায় ৩২ লাখ অভিবাসী ছিলেন, যা মোট অভিবাসীর ৬ শতাংশ।
এরপরের বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠীগুলো হলো— চীন থেকে ৩০ লাখ (৬ শতাংশ), ফিলিপাইন থেকে ২১ লাখ (৪ শতাংশ) এবং কিউবা থেকে ১৭ লাখ (৩ শতাংশ)।
গত জুলাইয়ে দ্য গার্ডিয়ান-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প দেশটির অভিবাসন বাস্তবায়ন ব্যবস্থাকে 'অতিমাত্রায় ত্বরান্বিত' করেছেন। এর ফলে অভিবাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রেকর্ড সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করেছেন।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জুনের তুলনায় প্রতিদিনের গড় গ্রেপ্তার সংখ্যা ২৬৮ শতাংশ বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রশাসন সব ধরনের অবৈধ অভিবাসীকে লক্ষ্য করছে, এমনকি যারা কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই তাদেরকেও।
এছাড়াও বিশ্লেষণে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৮ হাজার ১০০-এর বেশি মানুষকে তাদের নিজ দেশে নয় এমন অন্য দেশে বিতাড়িত করেছে।
ট্রাম্পের অভিবাসন কঠোর নীতির ধারা থামার কোনো চিহ্ন দেখাচ্ছে না। চলতি সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে তারা সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি বিদেশী নাগরিকের ভিসার রেকর্ড পুনর্মূল্যায়ন করছে। বিশেষ করে যাদের যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে অবস্থান বা ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে, এবং প্রয়োজনে তাদের ভিসা বাতিলের সম্ভাবনা যাচাই করছে প্রশাসন।