ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আলোচনা

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের সামরিক প্রধানরা ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেই বিকল্পগুলো তাদের নিজ নিজ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সাড়ে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানের যেকোনো চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি দেশটিকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করবেন।
পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পরিকল্পনাকারীরা এসব সামরিক বিকল্প তৈরি করেছে, যা মিত্র দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা 'যথাযথ বিবেচনার' জন্য পর্যালোচনা করবেন। রয়টার্স প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে যে সামরিক নেতারা এসবের বিকল্প প্রস্তুত করছেন।
মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং ইউক্রেনের সেনাপ্রধানরা ওয়াশিংটন ডিসিতে বৈঠক করেন।
এ বিষয়ে অবগত একটি সূত্র জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যিনি ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন, বৃহস্পতিবার তার ইউরোপীয় সমকক্ষদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।
অন্য এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, রুবিও বৈঠকে অংশ নেন যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েল, ইউরোপীয় কমিশন সভাপতির প্রধান সহকারী বিয়র্ন সিবার্ট, ন্যাটো মহাসচিবের প্রধান সহকারী জিওফ্রি ভ্যান লিউয়েন এবং ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে।
এ বিষয়ে অবগত এক সূত্র জানায়, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে। তবে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে মোতায়েন করা বাহিনীর বড় অংশই ইউরোপীয় দেশগুলো সরবরাহ করবে।
একই বক্তব্য শোনা যায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মন্তব্যে। বুধবার তিনি বলেন, এ অভিযানের ব্যয়ের বড় অংশ ইউরোপকেই বহন করতে হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, 'পরিকল্পনা প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।' ওয়াশিংটন এখনো তাদের ভূমিকার পরিধি নির্ধারণ করছে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেনে মার্কিন সেনা মোতায়েন করবেন না। তবে অন্য ধরনের সামরিক সহায়তার ব্যাপারে, যেমন বিমান সহায়তার সম্ভাবনা তিনি উন্মুক্ত রেখেছেন।
রয়টার্সকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আলোচনায় থাকা একটি বিকল্প হলো ইউক্রেনে ইউরোপীয় বাহিনী পাঠানো হলেও তাদের কমান্ড ও কন্ট্রোলের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকবে।
মার্কিন বিমান সহায়তা বিভিন্নভাবে আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে আরও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করা এবং মার্কিন যুদ্ধবিমান দিয়ে নো-ফ্লাই জোন কার্যকর করা।
ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাঁখো এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার উভয়েই ইচ্ছুক দেশের জোটের অংশ হিসেবে ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎসও তার দেশের অংশগ্রহণের প্রতি উন্মুক্ত মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
জার্মানির সেনাদের ইউনিয়নের প্রধান বৃহস্পতিবার বলেন, ইউরোপীয় ন্যাটো নেতাদের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে যে, দীর্ঘমেয়াদী ইউক্রেন শান্তি বাহিনীতে দশ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন প্রয়োজন হতে পারে।
ট্রাম্প ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এ যুদ্ধে দ্রুত সমাপ্তি চান। তবে কিয়েভ ও তার মিত্ররা উদ্বিগ্ন যে, তিনি হয়তো রাশিয়ার শর্তে একটি চুক্তি চাপিয়ে দিতে চাইতে পারেন।