ধীরেসুস্থে মাদুরোর ক্ষমতা ছাড়ার পরিকল্পনা দিয়েছিল ভেনিজুয়েলা, রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্র

ভেনেজুয়েলা সরকারের কর্মকর্তারা একটি গোপন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অবশেষে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন সাবেক কর্মকর্তার মতে, এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল কারাকাস সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ কমানো এবং একটি সমঝোতায় আসা।
কিন্তু হোয়াইট হাউস এই প্রস্তাবটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সে কর্মকর্তা জানান, পরিকল্পনাটি ছিল—মাদুরো আগামী তিন বছরের মধ্যে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দেবেন। এরপর রদ্রিগেজ ২০৩১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাদুরোর বর্তমান ছয় বছরের মেয়াদের বাকি অংশটুকু পূর্ণ করতেন।
ওই কর্মকর্তা আরও পরিষ্কার করে বলেন যে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ডেলসি রদ্রিগেজ পরবর্তীতে আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন না। কিন্তু হোয়াইট হাউস এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ তারা এখনও মাদুরোর শাসনের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ মনে করে এবং তাকে একটি 'মাদক-সন্ত্রাসী রাষ্ট্র' পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত করে থাকে।
মাদুরোর ক্ষমতা থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার এই গোপন পরিকল্পনার খবর এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন ভেনেজুয়েলার সরকারে এই আতঙ্ক বাড়ছে যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেকোনো মুহূর্তে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিতে পারেন।
বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন ভাষণে মাদুরো এই প্রতিবেদনটিকে উপহাস করে বলেন, রদ্রিগেজকে তার স্থলাভিষিক্ত করার খবরটি আসলে "আমাদের জনগণকে বিভক্ত করার" একটি ষড়যন্ত্র। তিনি ভেনেজুয়েলায় সিআইএ-কে অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের স্বীকারোক্তি নিয়েও ব্যঙ্গ করে বলেন, "কেউ কি সত্যিই বিশ্বাস করে যে, গত ৬০ বছরে সিআইএ ভেনেজুয়েলায় কাজ করেনি?"
ডেলসি রদ্রিগেজও এই কথিত পরিকল্পনাকে "ভুয়া খবর" বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি তার টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে ইংরেজিতে লিখেছেন, "FAKE!! (পুরোপুরি ভুয়া!!)"
হোয়াইট হাউসের 'মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ'
বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ভেনেজুয়েলায় সিআইএ-এর গোপন অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে, প্রশাসন এই অঞ্চলে আরও বড় ধরনের হামলার কথা বিবেচনা করছে।
একজন রাষ্ট্রপতির প্রকাশ্যে সিআইএ-এর গোপন অভিযান নিয়ে কথা বলা গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাসে বিরল। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে হোয়াইট হাউস হয়তো একটি কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে চাইছে: মাদুরো এবং তার সহযোগীদের মনে আরও বেশি ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া যে, তাদের দিন ফুরিয়ে আসছে।
ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভেনেজুয়েলা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান ফনসেকা বলেন, "এটা 'সাইঅপস' বা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। এর আসল উদ্দেশ্য হলো মাদুরো সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা এবং দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাতদের মধ্যে একটি ফাটল তৈরি করা, যাতে তারা মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়।"
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো ভান্ডা ফেলবাব-ব্রাউন বলেন, ভেনেজুয়েলার ওপর ট্রাম্পের এই চাপ সৃষ্টির মূল লক্ষ্য হলো দেশটির সামরিক নেতাদের মাদুরোর ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিতে বাধ্য করা। এতে মাদুরো মিত্রহীন হয়ে পড়বেন এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন।
তিনি আরও বলেন, "দিন দিন এটা পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক পদক্ষেপগুলোর আসল উদ্দেশ্য হলো মাদুরো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা।"
প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি ছোট দল—যার মধ্যে রয়েছেন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও এবং ট্রাম্পের সহযোগী স্টিফেন মিলার—এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, মাদুরোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক-সন্ত্রাস এবং কোকেন আমদানির ষড়যন্ত্রসহ একাধিক ফেডারেল মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এই বছর, বিচার বিভাগ মাদুরোর গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য দেওয়ার পুরস্কার দ্বিগুণ করে ৫০ মিলিয়ন ডলার করেছে এবং তাকে "বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মাদক পাচারকারী" হিসেবে ঘোষণা করেছে।