আমি রাজা নই: যুক্তরাষ্ট্রে ‘নো কিংস’ বিক্ষোভের আগে বললেন ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি 'রাজা নন'। শনিবার সারাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া 'নো কিংস' প্রতিবাদ কর্মসূচির আগে তিনি এ কথা বলেন। তবে তিনি একই সঙ্গে দাবি করেন যে চলমান সরকারি শাটডাউন তাঁকে এককভাবে ফেডারেল কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে।
শীর্ষ রিপাবলিকান নেতারা বারবার এই প্রতিবাদগুলিকে 'আমেরিকা-বিরোধী' সমাবেশ বলে অভিহিত করেছেন। তবে আয়োজকরা বলেন, এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য আমেরিকাকে ঘৃণা করা নয়; বরং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের অসন্তোষ প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়া।
ফক্স বিজনেসের মারিয়া বার্তিরোমোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, 'ওরা আমাকে রাজা বলে ডাকছে। আমি কোনো রাজা নই।' সাক্ষাৎকারের ক্লিপটি শুক্রবার প্রকাশ করা হয়।
ট্রাম্প আরও বলেন, ডেমোক্র্যাটরা চাইলে সরকার থেকে 'চিরতরে' দূরে থাকতে পারে, যাতে তিনি ডেমোক্র্যাটদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো—যেমন ওয়েলফেয়ার কর্মসূচি—কেটে দিতে পারেন।
তিনি বলেন, 'ওরা একটা ভুল করেছে, তারা সেটা বুঝতে পারেনি। এতে আমার এমন অধিকার তৈরি হয়েছে, যাতে আমি সেই সব কর্মসূচি বন্ধ করতে পারি যেগুলো রিপাবলিকানরা কখনোই চাইতো না। আমরা সেটা করছি, আর আমরা সেগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিচ্ছি।'
তবে সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকারের ব্যয় ও কোন কর্মসূচিতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে—এই ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নয়, কংগ্রেসের হাতে।
আগামী শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে আড়াই হাজারেরও বেশি 'নো কিংস' প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কর্মসূচির আয়োজক বা সহযোগী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে—আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ), আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স, হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেইন, ইনডিভিজিবল, মুভঅনসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান নেতারা, বিশেষ করে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন (রিপাবলিকান–লুইজিয়ানা), আগেভাগেই এই প্রতিবাদগুলোকে 'আমেরিকা-বিদ্বেষী সমাবেশ' এবং 'অ্যান্টিফা পরিচালিত আন্দোলন' বলে সমালোচনা করেছেন।
তবে জনসন শুক্রবার বলেন, 'এই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ বা প্রতিবাদের অধিকার প্রয়োগ করতে চাইলে কারও পথে কোনো বাধা তৈরি করা হবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'এটাই প্রমাণ করে আমাদের প্রজাতন্ত্র কতটা শক্তিশালী, আর আমেরিকা কতটা সুন্দর একটি দেশ। তারা এমন একটি দেশের সমালোচনা করছে, যে দেশ তাদের এই অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিচ্ছে।'
'সরকারি শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো যুক্তি এখন আর স্পিকার জনসনের হাতে নেই,' আগেই অ্যাক্সিওসের এপ্রিল রুবিনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেন 'নো কিংস' আন্দোলনের আয়োজকরা।
তাদের দাবি, সরকার আবার চালু করা, সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কিংবা শ্রমজীবী মানুষের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর কাজ করার বদলে জনসন এখন আক্রমণ করছেন সেই লক্ষ লক্ষ আমেরিকানকে, যারা শান্তিপূর্ণভাবে একত্রিত হয়ে বলছেন—আমেরিকা জনগণের, কোনো রাজার নয়।
যদিও ট্রাম্প নিজেই একসময় বলেছিলেন, পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি 'প্রথম দিন' থেকেই একজন স্বৈরশাসকের (ডিক্টেটর) মতো আচরণ করবেন।
এ বছর শুরুর দিকে যখন তিনি স্থানীয় সরকারগুলোর অনুমতি ছাড়াই ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত (ব্লু) শহরগুলোতে, তখন তার স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগে সমালোচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'আমি কোনো স্বৈরশাসককে পছন্দ করি না। আমি স্বৈরশাসক নই। আমি সাধারণ জ্ঞানে সমৃদ্ধ ও বুদ্ধিমান একজন মানুষ।'
এ ছাড়াও, গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের সরকারি এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে, কারণ তারা প্রেসিডেন্টের একটি ভুয়া টাইম ম্যাগাজিনের কভার ছবি পোস্ট করেছিল। সেখানে ট্রাম্পকে মুকুট পরা অবস্থায় দেখানো হয় এবং উপরে লেখা ছিল—"রাজা দীর্ঘজীবী হোন!"