সেনা মোতায়েন, আকাশপথে সহায়তা: ইউক্রেনের নিরাপত্তায় যত পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীরা ইতোমধ্যে ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) মার্কিন কর্মকর্তারা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করা ও যেকোনো চুক্তির অধীনে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার এক শীর্ষ সম্মেলনে কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা উৎসাহ দেখালেও, এখনো বহু প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন) বর্তমানে এমন কিছু পরিকল্পনা করছে, যাতে অস্ত্র সরবরাহের বাইরেও ইউক্রেনকে সহয়তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, কোন পদক্ষেপগুলো সামরিকভাবে সম্ভব এবং রাশিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে—তা নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পরিকল্পনাকারীদের সময় লাগবে।
দুটি সূত্র জানিয়েছে, একটি সম্ভাব্য প্রস্তাব হলো ইউরোপীয় বাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠানো। তবে তাদের কমান্ড ও কন্ট্রোলের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র নেবে। যদিও এ বাহিনী ন্যাটোর ব্যানারে নয়, বরং নিজ নিজ দেশের পতাকার অধীনে কাজ করবে।
পেন্টাগন এবং ন্যাটো তাৎক্ষণিকভাবে এই ধারণার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
হোয়াইট হাউস এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সমন্বয় করতে সহায়তা করতে পারে।
তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ন্যাটো দেশগুলোর সেনা মোতায়েন তারা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
আকাশপথে সহায়তার ইঙ্গিত ট্রাম্পের
ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ইউক্রেনে পাঠাবেন না, তবে মঙ্গলবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সামরিক সহায়তার জন্য পথ খোলা রেখেছেন।
ফক্স নিউজের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে আকাশপথে সহায়তা দিতে পারে। তিনি বলেন, 'নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইউরোপীয়রা লোক পাঠাতে ইচ্ছুক, আমরা বিমানের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারি, কারণ তাদের কাছে আমাদের মতো ক্ষমতা নেই।' তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি দেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সহায়তা বিভিন্নভাবে হতে পারে, যেমন ইউক্রেনকে আরও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়া বা ফাইটার জেটের মাধ্যমে নো-ফ্লাই জোন বজায় রাখা।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে সেনা নয়, আকাশপথে সহায়তার ইঙ্গিত ট্রাম্পের
২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠিয়েছে।ট্রাম্প প্রশাসন একসময় এই শিপমেন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিল, তবে পরে আবার চালু করা হয়।
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রধানত প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র পাঠিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সহায়তা করবেন।
বৈঠক করবেন ন্যাটো সামরিক প্রধানরা
ন্যাটো সামরিক প্রধানরা বুধবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন। সেখানে মূল আলোচ্য বিষয়, ইউক্রেন পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের পদক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স জেনারেল অ্যালেক্সাস গ্রিনকিউইচ সামরিক প্রধানদের ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আলাস্কা বৈঠক সম্পর্কে অবহিত করবেন।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনও বৈঠকে অংশ নেবেন এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কিছু ইউরোপীয় সামরিক প্রধানদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে দেখা করবেন।
ট্রাম্প ইউরোপের ৮০ বছরের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি চেয়েছেন। কিয়েভ ও পশ্চিমা জোট আশঙ্কা করছে, তিনি হয়তো রাশিয়ার শর্ত অনুযায়ী ইউক্রেনের ওপর কোনো চুক্তি চাপাতে চাইবেন।
রাশিয়া বলছে, তারা ইউক্রেনে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' চালাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা রক্ষা করতে। তারা দাবি করছে ,ন্যাটোর পূর্ব দিকে সম্প্রসারণ ও পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তা হুমকি সৃষ্টি করছে।
কিয়েভ ও পশ্চিমা জোট মনে করছে, এটি সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ।