অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ অভিযোগ নেতানিয়াহুর

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ 'ইসরায়েলর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা' করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহু বলেন, 'অস্ট্রেলিয়ার ইহুদি সম্প্রদায়কে পরিত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।' গত কয়েক দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে থাকার প্রেক্ষিতে এ কথা বলেন তিনি। খবর বিবিসি'র।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) নেতানিয়াহু বলেন, বলেন, 'ইতিহাস আলবানিজকে একজন দুর্বল রাজনীতিবিদ হিসেবে মনে রাখবে।'
সোমবার (১৮ আগস্ট) অস্ট্রেলিয়া নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন জোটের এক কট্টর-ডানপন্থী সদস্যকে দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর জবাবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য নিযুক্ত অস্ট্রেলীয় প্রতিনিধিদের ভিসা বাতিল করে।
অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন–বিষয়ক মন্ত্রী টনি বার্ক বলেন, নেতানিয়াহু আসলে 'ক্ষোভ প্রকাশ করছেন'। কারণ, অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার পর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বার্ক বলেন, 'শক্তি মানে কত মানুষকে আপনি উড়িয়ে দিতে পারবেন বা কতজনকে না খাইয়ে রাখতে পারবেন, তা নয়।'
আলবানিজে পরে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি 'এসব বিষয় ব্যক্তিগতভাবে নেন না'।
তিনি বলেন, 'আমি অন্য দেশের নেতাদের সম্মানের সাথে দেখি এবং কূটনৈতিকভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।'
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতানিয়াহুর মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, এসব মন্তব্য আসলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর জন্য 'একটি উপহার'।
তিনি এক্সে লিখেছেন, 'নেতানিয়াহুর সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি আজকের গণতান্ত্রিক বিশ্বে একজন নেতাকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী করে তোলে। তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত রাজনীতিক।'
তিনি আরও লেখেন, 'বিবি (নেতানিয়াহু) কেন তাড়াহুড়া করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের উপহার দিচ্ছেন, তা স্পষ্ট নয়।'
অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয় গত সোমবার। অস্ট্রেলিয়া সরকার কট্টর-ডানপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিক সিমচা রথম্যানের দেশ সফরের আগে তাঁর ভিসা বাতিল করে। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জিউইশ অ্যাসোসিয়েশন (এজেএ) আয়োজিত কয়েকটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিলেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকে বার্ক বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার 'কঠোর অবস্থান' নিয়েছে তাদের প্রতি, যারা বিভেদ ছড়াতে চান। তিনি আরও বলেন, 'আপনি যদি ঘৃণা ও বিভেদের বার্তা ছড়াতে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন, তবে আমরা আপনাকে এখানে চাই না।'
গত বছরও বার্ক ইসরায়েলের সাবেক বিচারমন্ত্রী আয়েলেত শাকেদের ভিসা বাতিল করেছিলেন। ২০২২ সালে তিনি ইসরায়েলের পার্লামেন্ট ছেড়ে যান।
রথম্যানের ভিসা বাতিলের কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার জানান, তিনি ক্যানবেরায় ইসরায়েলি দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ভিসার যেকোনো আবেদন খুব সতর্কভাবে পরীক্ষা করা হয়। এক্সে দেওয়া পোস্টে গিডিওন সার আরও লেখেন, 'অস্ট্রেলিয়ায় যখন ইহুদি ও ইহুদি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন দেশটির সরকার সেটিকে আরও উসকে দিচ্ছে।'
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অস্ট্রেলিয়ায় একের পর এক ইহুদিবিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে মাথাপিছু হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি 'হলোকাস্ট থেকে বাঁচা' জনগোষ্ঠী বসবাস করে।
মঙ্গলবার এজেএ জানায়, রথম্যান তাদের অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন। তারা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছে, 'ইহুদি সম্প্রদায় টনি বার্ক বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ংয়ের কাছে মাথা নত করবে না।'
চলতি আগস্টের শুরুতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয় অস্ট্রেলিয়া। তখন প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বলেন, যুদ্ধের কারণে নিরীহ মানুষের ওপর যে প্রভাব পড়ছে, তা নেতানিয়াহু অস্বীকার করছেন। তিনি আরও বলেন, 'গাজায় আমরা যে সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়া দেখেছি এবং তারপর খাবার ও পানির জন্য লাইনে দাঁড়ানো মানুষ মারা যাচ্ছেন—এসব সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।'
জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার পর অস্ট্রেলিয়াও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা দেয়।
এ ঘোষণার পর নেতানিয়াহু যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এমানুয়েল মাখোঁ ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে 'গণহত্যাকারী, ধর্ষক, শিশু হত্যাকারী ও অপহরণকারীদের' পাশে দাঁড়ানোর অভিযোগ আনেন।
হামাস–নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৬২ হাজার ৬৪ জন নিহত হয়েছেন।