দেহ আসলে কখন বুড়িয়ে যেতে শুরু করে? নতুন গবেষণায় মিলল চমকপ্রদ তথ্য

মানুষের বয়স যত বাড়ে, ততই শরীরে নানা পরিবর্তন দেখা দেয়—কিন্তু বয়স বাড়ার এই গতি হঠাৎ করে ত্বরান্বিত হয় ঠিক কখন? সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, বার্ধক্য প্রকৃত অর্থে আরও আগেই গতি পেতে শুরু করে।
চীনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর গবেষকরা ১৪ থেকে ৬৮ বছর বয়সী প্রায় ৭০ জনের শরীর থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন টিস্যুতে থাকা প্রোটিন বিশ্লেষণ করে এই তথ্য দিয়েছেন। গবেষণাটি ২৫ জুলাই 'সেল' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রোটিন শরীরের কোষের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব প্রোটিন কখন কীভাবে তৈরি হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করেই কোষের বার্ধক্য শনাক্ত করা সম্ভব বলে জানান টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ব্রাঞ্চের অধ্যাপক ও অ্যাসোসিয়েট ডিন ড. থমাস ব্ল্যাকওয়েল। তিনি বলেন, 'কোষ যখন আর ঠিকভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে প্রোটিন তৈরি করতে পারে না, তখনই বার্ধক্যের লক্ষণ ধরা পড়ে।'
গবেষকেরা হৃদপিণ্ড, লিভার, অগ্ন্যাশয়, প্লীহা, ফুসফুস, ত্বক এবং পেশিসহ শরীরের নানা অঙ্গের টিস্যু বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে বার্ধক্যের গতি হঠাৎ বেড়ে যায়।
তবে সব অঙ্গ একসঙ্গে বা একই গতিতে বয়স্ক হয় না। গবেষণায় দেখা যায়, প্লীহা, অ্যাওর্টা (দেহের প্রধান ধমনী) এবং অ্যাডরিনাল গ্রন্থিতে (যা হরমোন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে) বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয় ৩০ বছর বয়সেই। এর মধ্যে আবার অ্যাওর্টাতেই সবচেয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান, নিউরোসায়েন্স ও ফিজিওলজির অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক এবং নিউইয়র্ক জিনোম সেন্টারের গবেষক নেভিল সঞ্জানা বলেন, 'এটা এক ধরনের মানচিত্র, যা আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বার্ধক্য কেমনভাবে ঘটে, তার একটি মৌলিক চিত্র তুলে ধরছে।'
এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতে বার্ধক্যজনিত দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসা উদ্ভাবনে সহায়ক হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তার মতে, এই তথ্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ও নতুন ধরনের থেরাপি তৈরিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে, যা মানুষকে শুধু দীর্ঘজীবন নয়, বরং দীর্ঘ সময় সুস্থ জীবনও উপহার দিতে পারে।
ড. ব্ল্যাকওয়েলের মতে, এই গবেষণা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে এসেও বার্ধক্যের গতি কমানোর সুযোগ রয়েছে, তবে সময় খুব কম।
তার পরামর্শ, রক্তচাপ, রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান না করা এবং অতি অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল পান করাই সুস্থ বার্ধক্যের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
তিনি বলেন, '৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলে আপনি সুস্থ জীবনপ্রবাহে বাড়তি ১০ বছর পেতে পারেন। এই গবেষণা কোষীয় স্তরেই সেই সত্যটা তুলে ধরেছে।'