ইসরায়েলের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাই বলল, গাজায় গণহত্যা চলছে

ইসরায়েলের দুই প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, গাজায় চলমান যুদ্ধের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে 'গণহত্যা' চালাচ্ছে ইসরায়েল।
সোমবার (২৮ জুলাই) জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের পৃথক গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই অভিযোগ তোলে বিখ্যাত মানবাধিকার সংগঠন বেতসেলেম এবং ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস-ইসরায়েল (পিএইচআরআই)।
দুই সংস্থার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, 'এই অন্ধকার সময়ে সত্যকে সত্য বলা উচিত। আমরা এই অপরাধ অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাই।'
প্রসঙ্গত, এটি প্রথমবারের মতো—ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ কোনো মানবাধিকার সংস্থা দেশটির সরকারকে গাজায় 'গণহত্যা' চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করল।
তবে ইসরায়েল সরকার এসব অভিযোগ 'সরাসরি ও কঠোরভাবে' প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেন, 'আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী কেবল সন্ত্রাসীদেরই টার্গেট করে, বেসামরিকদের নয়। গাজার দুর্দশার জন্য দায়ী হামাস।'
সংবাদ সম্মেলনে বেতসেলেমের নির্বাহী পরিচালক ইউলি নভাক বলেন, 'এমন একটি প্রতিবেদন আমাদের লিখতে হবে, তা কখনো ভাবিনি।'
বেতসেলেমের ৮৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন বলছে, 'গাজায় ইসরায়েলের নীতিমালা, তার ভয়াবহ পরিণতি এবং এই হামলার লক্ষ্যবস্তু নিয়ে দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে—ফিলিস্তিনি সমাজকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।'
অন্যদিকে, পিএইচআরআই তাদের ৬৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে গাজায় স্বাস্থ্যখাতে 'পদ্ধতিগত ও পরিকল্পিত হামলার' অভিযোগ আনে। তারা বলেছে, 'হাসপাতাল ধ্বংস, চিকিৎসা সরঞ্জাম আটকে দেওয়া, রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের টার্গেট করা—এসবের মাধ্যমে গাজার জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থাগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।'
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. গাই শালেভ বলেন, 'গণহত্যার মুখে চুপ করে থাকা চলে না। আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই—এটা শুধু রাজনৈতিক বা আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ নয়। বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতেরও এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।'
প্রতিবেদনগুলোতে ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের 'ভয়াবহ ও অপরাধমূলক হামলা'কে গাজায় চলমান পরিস্থিতির একটি 'ট্রিগারিং ইভেন্ট' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই হামলা ইসরায়েলিদের মধ্যে আতঙ্ক ও সম্মিলিত ট্রমার জন্ম দেয়।
কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সরকার একটি চরমপন্থাপূর্ণ, মানবতা-বিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করে। যার মধ্যে ছিল—গাজাবাসীদের সামগ্রিকভাবে 'শত্রু' হিসেবে চিহ্নিত করা, রাজনৈতিক-সামরিক নেতাদের বক্তব্যে ফিলিস্তিনিদের 'অমানবিক' আখ্যা দেওয়া এবং মাটিতে লড়াইরত সেনাদের মধ্যে সেই বর্ণনা ছড়িয়ে দেওয়া।
পিএইচআরআই জানায়, ইসরায়েল যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা যুদ্ধের আবর্তে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সুপরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনিদের একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।
তারা আরও বলেছে, ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে গণহত্যার যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার অন্তত তিনটি দিক এই ঘটনাগুলো পূরণ করে। উল্লেখ্য, ইসরায়েল নিজেই ওই চুক্তির একজন স্বাক্ষরকারী দেশ।