শুল্ক আরোপের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কিছু বাণিজ্যচুক্তি প্রায় চূড়ান্ত: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে এবং ৯ জুলাইয়ের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলোকে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের বিষয়টি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনেক দেশের বাণিজ্য সংঘাত শুরু হয়, যা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় চুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ট্রাম্প অধিকাংশ দেশের ওপর ১০ শতাংশ এবং অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে পরে এসব দেশের মধ্যে ৯০ শতাংশকে তিন সপ্তাহ সময় দেন, যা বুধবার শেষ হচ্ছে।
রোববার নিউ জার্সিতে গলফ খেলার পর ওয়াশিংটনে ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি আগেই ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তবে সব শুল্ক একসঙ্গে বাড়বে কি না, তা তখন স্পষ্ট ছিল না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, 'উচ্চ শুল্ক ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনই শুল্ক হার ও চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করছেন।'
পরে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ জানান, সোমবার দুপুর ১২টা (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) থেকে শুল্ক বিষয়ক চিঠি পাঠানো শুরু হবে।
এক পৃথক পোস্টে তিনি নতুন শুল্ক নীতি ঘোষণা করে বলেন, যেসব দেশ ব্রিকস জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে 'অ্যান্টি-আমেরিকান নীতি' অনুসরণ করছে, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে এবং কারও জন্যই ছাড় থাকবে না।
২০০৯ সালে প্রথম ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেয় ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। পরে যোগ দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। গত বছর নতুন করে যুক্ত হয় মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ট্রাম্প সৌদি আরব ও আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনার কথাও বলছেন।
রোববার ব্রিকস নেতারা গাজা ও ইরানে হামলার নিন্দা জানান, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের আহ্বান জানান এবং শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন।
তবে ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি ভারতের মতো ব্রিকস দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্য আলোচনা প্রভাবিত করবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
এর আগে রোববার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বড় কিছু বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ট্রাম্প আরও বলেন, যেসব ছোট দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সীমিত, এমন ১০০টির বেশি দেশকে তিনি চিঠি পাঠাবেন এবং জানাবেন, তাদের ওপর শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
বেসেন্ট বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের জানাবেন—যদি আপনারা দ্রুত চুক্তির পথে না আসেন, তাহলে ১ আগস্ট থেকে ২ এপ্রিলের পুরোনো শুল্ক হার পুনরায় কার্যকর হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার মনে হয় খুব শিগগিরই অনেক চুক্তি সম্পন্ন হবে।'
হোয়াইট হাউসের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান কেভিন হ্যাসেট সিবিএসকে বলেন, যেসব দেশ আন্তরিকভাবে আলোচনা করছে, তাদের কিছুটা সময় দেওয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, 'ডেডলাইন আছে, আবার অনেক কিছুর চূড়ান্ত পর্যায়ও চলছে। তাই কিছু ক্ষেত্রে সময় পেছাতেও পারে।' তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান স্টিফেন মিরান এবিসি নিউজকে বলেন, শুল্ক কমাতে হলে দেশগুলোকে কিছু ছাড় দিতেই হবে।
তিনি বলেন, 'ইউরোপ ও ভারতের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে ভালো খবর পাচ্ছি। আশা করছি, যারা ছাড় দেওয়ার পথে এগোচ্ছে, তারা হয়তো শুল্ক আরোপের সময় কিছুটা পেছাতে পারবে।'
বেসেন্ট সিএনএনকে আরও বলেন, তারা ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার দেশের ওপর নজর রাখছেন, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাণিজ্য ঘাটতির ৯৫ শতাংশের জন্য দায়ী। তবে তিনি অভিযোগ করেন, অনেক দেশ চুক্তি চূড়ান্ত করতে গড়িমসি করছে।
থাইল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী পিচাই চুনহাভাজিরা ব্লুমবার্গকে জানান, ৩৬ শতাংশ শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি ও শিল্পপণ্যের জন্য বাজার খুলে দেওয়া হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি ও বোয়িং বিমানের অর্ডার বাড়ানো হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-টিভি১৮ জানায়, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি ছোট পরিসরের বাণিজ্য চুক্তি আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে। এতে ভারতীয় পণ্যের ওপর গড়ে ১০ শতাংশ শুল্ক বসবে।
হ্যাসেট সিবিএস নিউজকে বলেন, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা এগোচ্ছে। ট্রাম্পের চাপের ফলে অনেক দেশ এখন উৎপাদন সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আনছে।
মিরান বলেন, 'ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তিটা দুর্দান্ত হয়েছে। এটা একপেশে—আমরা ওদের পণ্যে বড় শুল্ক বসাতে পারছি, আর ওরা আমাদের পণ্যে শূন্য শুল্ক দিচ্ছে।'