প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

প্রথম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের তালেবানশাসিত সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তকে 'সাহসী' পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছেন। খবর বিবিসি'র।
এর আগে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তান কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করলেও, তালেবান সরকারের চার বছরের শাসনামলে রাশিয়াই একমাত্র দেশ যারা তাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিল।
বৃহস্পতিবার কাবুলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনোভের সঙ্গে বৈঠক করেন মুত্তাকি। সেখানে দিমিত্রি আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ সরকারের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন যে—রাশিয়া 'ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান'কে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এই স্বীকৃতিকে মুত্তাকি 'ইতিবাচক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়, পারস্পরিক সম্মান এবং গঠনমূলক অংশীদারিত্ব'-এর সূচনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এটি অন্য দেশগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।'
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বিনিয়োগের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে তালেবান সরকার। যদিও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তারা আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, 'আফগানিস্তানে ইসলামিক আমিরাত সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দ্বিপাক্ষিক কার্যকর সহযোগিতার পথে গতি আনবে।'
মন্ত্রণালয়টি জানায়, তারা জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি ও অবকাঠামো খাতে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখছে। সন্ত্রাস ও মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে কাবুলকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে রাশিয়া।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর অনেক দেশ তাদের কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করলেও রাশিয়া তার কাবুল দূতাবাস চালু রেখেছে। টেলিগ্রামে এক বার্তায় তারা জানায়, কাবুলের সঙ্গে 'সংলাপ সম্প্রসারণ' আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগেই ২০২২ সালে তালেবান সরকারের সঙ্গে প্রথম আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চুক্তি করে রাশিয়া, যার আওতায় আফগানিস্তানে তেল, গ্যাস ও গম রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়।
চলতি বছরের এপ্রিলে তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে সরায় রাশিয়া। তাদের ভাষায়, এটি 'সম্পূর্ণ অংশীদারিত্ব' গড়ার পথ তৈরি করতে সহায়ক হবে।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে 'সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে মিত্র' বলে উল্লেখ করেন। ২০১৮ সাল থেকেই তালেবান প্রতিনিধি দল মস্কো সফর করে আসছে।
তবে দুই দেশের ইতিহাস জটিল। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে একটি মিত্র সরকার বসানোর চেষ্টা করেছিল, যা আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়। নয় বছরের যুদ্ধে রাশিয়ার ১৫ হাজার সৈন্য নিহত হয়। অবশেষে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে।
পশ্চিমা দেশগুলো ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তালেবান সরকারের কঠোর সমালোচক। শরিয়া আইন বাস্তবায়নের নামে তারা নারীদের অধিকার খর্ব করছে—এমন অভিযোগ উঠছে। নারীদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ, ঘর থেকে বের হতে হলে পুরুষ অভিভাবক বাধ্যতামূলক, কঠোর পোশাকবিধি এবং সর্বশেষ 'পুণ্যের আদেশ' আইনে নারীদের ঘরের বাইরে কথা বলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জাতিসংঘ এসব বিধিকে 'লিঙ্গবিচ্ছিন্নতা' হিসেবে অভিহিত করেছে এবং জানিয়েছে, সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর প্রকাশ্যে দণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আফগানিস্তানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার মধ্যে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার সম্পদ জব্দ করা অন্যতম।