মহাকাশ গবেষণায় ৭৫ ইঁদুর, ১ হাজারেও বেশি ফলমাছি পাঠাচ্ছে রাশিয়া

মহাকাশ গবেষণায় নতুন এক উদ্যোগ নিচ্ছে রাশিয়া। 'বায়ন–এম নং–২' নামের বায়োস্যাটেলাইটে ভর করে ৭৫টি ইঁদুর, এক হাজারেরও বেশি ফলমাছি, অণুজীব, সেল কালচার ও উদ্ভিদের বীজ আগামী ২০ আগস্ট মহাকাশে উড়বে। কাজাখস্তানের বাইকনুর কসমোড্রোম থেকে সয়ুজ–২.১বি রকেটের সাহায্যে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হবে।
রসকসমস এ মিশনকে বলছে 'নোহা'স আর্ক'। ৩০ দিন মহাকাশের বিকিরণ ও শূন্যতায় ভেসে থাকার পর সেটি প্যারাস্যুটের সাহায্যে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।
এই যাত্রার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে চাঁদ গবেষণার সম্ভাবনাও। রাশিয়ার ভেরনাডস্কি ইনস্টিটিউট ও আইএমবিপি তৈরি করেছে বিশেষ টেস্ট টিউবভর্তি নমুনা, যাতে চাঁদের মাটি ও পাথরের মতো উপাদান রাখা হয়েছে।
এগুলো ফিরে আসার পর বিশ্লেষণ করে দেখা হবে মহাকাশের বিকিরণ ও শূন্যতায় কেমন পরিবর্তন ঘটেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ তথ্য ভবিষ্যতে চাঁদে ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনায় কাজে লাগবে।
আইএমবিপির মতে, এ মিশন থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে। যেমন- জীবের বিকিরণ-সহনশীলতার ওপর মাইক্রোগ্রাভিটির প্রভাব, নভোচারীদের চিকিৎসা সহায়তার নতুন নির্দেশনা তৈরির উপাত্ত, মহাকাশ ভ্রমণের জীববৈজ্ঞানিক প্রভাব, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও কাজে লাগতে পারে।
বায়ন–এম নং–২ প্রায় ৯৭ ডিগ্রি ঢালে একটি মেরু কক্ষপথে ৩০ দিন ঘুরবে। এতে আগের 'বায়ন–এম নং–১'–এর তুলনায় অন্তত দশগুণ বেশি মহাজাগতিক বিকিরণ ধরা পড়বে। এ সময়ে রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা দশটিরও বেশি পরীক্ষা চালাবেন।

ইঁদুর বেছে নেওয়ার পেছনে কারণও আছে। মানুষের সঙ্গে জিনগত মিল, স্বল্প জীবনচক্রে প্রজন্মগত পরিবর্তন বোঝা, আর বিকিরণের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা—এসব কারণে পরীক্ষার জন্য তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই মিশনে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে ইঁদুরদের। একদল পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিবেশে থাকবে, আরেকদল পরীক্ষাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে, আর তৃতীয় দল যাবে মহাকাশে।
প্রতিটি ইঁদুরবাহী ইউনিটে রয়েছে খাবার, আলো, বাতাস চলাচল ও বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা। সেন্সর ও ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের আচরণ ও শারীরবৃত্তীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কিছু ইঁদুরের শরীরে বসানো হয়েছে মাইক্রোচিপও।
ফিরে আসার পর গবেষকরা দেখবেন, মহাকাশে ইঁদুরগুলো কেমন মানিয়েছে এবং পৃথিবীতে ফিরে আবার কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।
রসকসমস মনে করছে, এ মিশন দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অভিযানে মানুষের টিকে থাকার প্রস্তুতি গড়তে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।