ইউক্রেনে সেনা নয়, আকাশপথে সহায়তার ইঙ্গিত ট্রাম্পের

ইউক্রেনে মার্কিন সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা নাকচ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে আকাশপথে সহায়তা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ফক্স নিউজের 'ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস' অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এমন কথা জানান।
এর একদিন আগে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধ অবসানে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখনো শান্তির পথ অনিশ্চিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে কী ধরনের সামরিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে, তা নির্ধারনে এখনো কাজ করছে।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, 'নিরাপত্তার প্রশ্নে ইউরোপীয়রা সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত। আমরা তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারি। সেটা আকাশপথে হতে পারে।' তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এর আগে সোমবারের (১৮ আগস্ট) বৈঠকের পর ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া এক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের উপর সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা চালিয়েছে। এতে ২৭০টি ড্রোন ও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় মধ্য দেশটির পলতাভা অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে এবং সেখানে অবস্থিত দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শেষ পর্যন্ত কোনো চুক্তি করতে চাইবেন না। তিনি বলেন, 'আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি পুতিনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারব।'
তবে শান্তি চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তার ধরন এখনো পরিষ্কার নয়। আকাশপথে সহায়তা বলতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান দিয়ে নো-ফ্লাই জোন কার্যকর করা এমন নানা ধরনের পদক্ষেপ থাকতে পারে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটও আকাশপথে সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনিও ট্রাম্পের মতো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে মার্কিন সেনা যাবে না। তবে আমরা সমন্বয় করতে পারি এবং ইউরোপীয় মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য অন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।'
বিশ্লেষকদের হিসাবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত বা আহত হয়েছেন।
ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসের আলোচনাকে বড় অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ট্রাম্প ও পুতিনকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারির ওভাল অফিস বৈঠকের তুলনায় জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সম্পর্ক ছিল অনেক বেশি আন্তরিক।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ট্রাম্প হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে বৈঠকে বুদাপেস্টকে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে আলোচনা করেছেন।
এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ইস্তানবুলের নামও আলোচনায় এসেছে। কারণ, এর আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল সেখানে বৈঠক করেছিল।
হাঙ্গেরি ইউরোপের অল্প কয়েকটি দেশের একটি, যেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও পুতিন যেতে পারেন। কারণ দেশটির প্রধানমন্ত্রী অরবান রুশ নেতার ঘনিষ্ঠ মিত্র।
তবে ইউক্রেন হাঙ্গেরিকে বৈঠকের স্থান হিসেবে গ্রহণ করবে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
অন্যদিকে নিরপেক্ষ সুইজারল্যান্ডও জানিয়েছে, তারা শান্তি বৈঠক হলে পুতিনকে আতিথ্য দিতে প্রস্তুত।
লেভিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, জেলেনস্কির প্রস্তাবিত বৈঠক আয়োজনের কথা চলছে। তবে তিনি নিজে এতে অংশ নেবেন কিনা, তা নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, তারা আমাকে ছাড়া বৈঠক করলে ভালো হবে। তবে প্রয়োজন হলে আমি যাব।'