ইরানে হামলাকে হিরোশিমার সাথে তুলনা, গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিলেন না ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো হামলার প্রভাবকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার দাবি, এই হামলার ক্ষতি ছিল মারাত্মক, যদিও গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট তেমন নিশ্চিত নয়।
রয়টার্সসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম মঙ্গলবার জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ) মনে করছে এই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি হয়তো কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে। কিন্তু ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের বক্তব্য ছিল, ইরানের কর্মসূচি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে দ্য হেগে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে এক বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেন, "গোয়েন্দা তথ্য খুবই অস্পষ্ট ছিল… তারা বলছে, 'আমরা জানি না, হতে পারে এটা মারাত্মক ক্ষতি করেছে।' তাহলে ধরে নেওয়া যাক, তারা সঠিক। তবে আমি বলব 'আমরা জানি না' এই কথার বদলে বলা উচিত, এটা ছিল মারাত্মক। এটা ছিল পুরোদমে ধ্বংসের সামিল।"
ইরানে হামলার সাফল্য ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক বরাবরই টানাপোড়েনপূর্ণ। তাই ইরানে চালানো সাম্প্রতিক হামলার সফলতা তার জন্য কেবল সামরিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই হামলার আগে তার ডানপন্থী সমর্থকদের অনেকেই জোরালোভাবে বলেছিলেন বিদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ ট্রাম্পের 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' স্লোগানের বিপরীত। তিনি বরাবরই বলে এসেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশের জটিলতায় জড়ানো চলবে না। তাই এই অভিযান ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে করছিলেন অনেকেই।
তবে ট্রাম্প পাল্টা যুক্তি দেন ৩২ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না। আর এই হামলাই প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র এই লক্ষ্য পূরণে দৃঢ়।
তিনি দাবি করেন, এই মার্কিন হামলাই ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছে। এমনকি এই হামলাকে তিনি তুলনা করেন ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ করার সঙ্গে।
"আমি হিরোশিমা বা নাগাসাকির উদাহরণ টানতে চাই না। কিন্তু এটাও সেই রকমই কিছু ছিল। ওটা যেমন যুদ্ধ শেষ করেছিল, এটাও তাই করল," বলেন ট্রাম্প।
তার দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এক ধাক্কায় 'দশকখানেক পিছিয়ে গেছে', এমনকি ভবিষ্যতে তারা হয়তো আর এমন কিছু করার সাহস পাবে না।
ট্রাম্পের বক্তব্যে সুর মেলালেন হেগসেথ ও রুবিও
ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার রাতে নেদারল্যান্ডসে পৌঁছান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরদিন তিনি যখন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন, তখন তার পাশেই ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। দুজনেই ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
হেগসেথ বলেন, "আপনি যদি আসল রিপোর্টটি দেখেন—যেটা কিন্তু 'টপ সিক্রেট' রিপোর্ট ছিল—তাহলে বোঝা যাবে এটা ছিল খুবই প্রাথমিক এবং এতে আত্মবিশ্বাসের মাত্রা কম। এখানে স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।"
তিনি জানান, এই গোপন প্রতিবেদন কীভাবে ফাঁস হলো, তা নিয়ে এফবিআই তদন্ত শুরু করেছে। রুবিওর ভাষায়, "যারা রিপোর্টটি বাইরে দিয়েছে, তারা এর অর্থও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। এটাই তাদের খেলা।"
তিনজনই একসঙ্গে গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের কড়া সমালোচনা করেন। তাদের মতে, মিডিয়া তথ্যের অপব্যাখ্যা করে রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি করতে চাইছে।
এদিকে সম্মেলনে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। যদিও কিছু দেশ জানিয়েছে তারা এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে নিজেদের জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে।
অনুবাদ: নাফিসা ইসলাম মেঘা