যেভাবে ট্রাম্পের জন্মদিনে সামরিক কুচকাওয়াজ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ

শনিবার (১৪ জুন) ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মদিন। ওই দিনেই ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলে আয়োজন করা হয়েছিল এক ব্যয়বহুল সামরিক প্যারেড। সরকারি ভাষ্যে যেটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ২৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন। কিন্তু পর্দার আড়ালে অনেকে এটিকে বলছিলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মদিনের প্যারেড।'
বিভিন্ন যুদ্ধের প্রতীক নিয়ে সাজানো প্যারেড শুরু হয় পেন্টাগন থেকে। রাস্তায় মার্চ করে যান বিপুল সংখ্যক সেনাসদস্য, কেউ ছিলেন ঘোড়ায়, কেউ বা ট্যাংকে, কেউ আবার হাউইটজার কামানে। আকাশে ওড়ে হেলিকপ্টার ও ড্রোন, আকাশ থেকে নামেন প্যারাস্যুটধারীরা। এমনকি রোবট কুকুরও দেখা গেছে। সেই বিশাল আয়োজনের মূল লক্ষ্য যে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আত্মতুষ্টি—তা অস্বীকার করা কঠিন।
'বাহিনীর জন্মদিন' না, আসলে ট্রাম্পের রাজকীয় শো
মূলত বিপুল সরকারি অর্থ ও সময় ব্যয় করে, এটি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের এক 'মর্যাদাপূর্ণ' প্রচেষ্টা—যাতে করে প্রেসিডেন্ট নিজেকে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে আবারও তুলে ধরতে পারেন।
মঞ্চে ট্রাম্পের পাশে ছিলেন তার স্ত্রী মেলানিয়া এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ। ট্রাম্পের মঞ্চে এককভাবে দাঁড়িয়ে থাকা, ১ম ক্যাভালরি ডিভিশনের সেনাদের অভিবাদন জানানো এবং পরবর্তীতে নতুন ২৫০ জন সেনাকে শপথ পড়ানো, সবই ছিল তার 'সাহসী কমান্ডার ইন চিফ' চিত্রকে জোরদার করার অংশ।
সি-স্প্যানে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, বক্তৃতার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হাই তুলছেন। সেনা কর্মকর্তারা 'ওয়ার অন টেরর'-এর গৌরবগাথা ব্যাখ্যা করছেন, আবার উপস্থাপক বলছেন, 'বিশেষ ধন্যবাদ আমাদের স্পনসর লকহিড মার্টিন, কোইনবেস এবং প্যালানটিয়রকে।'

ক্রিপ্টো, করপোরেট, কনসার্ট
অনুষ্ঠানে আরও দেখা যায়, আমেরিকার সবচেয়ে বড় অস্ত্র কোম্পানি লকহিড মার্টিন ও ডাটা কোম্পানি প্যালানটিয়র থেকে শুরু করে ইউএফসি (মিক্সড মার্শাল আর্টস)-এর লোগো পর্যন্ত ঘুরে ফিরে আসছে। বিতরণ করা হয় ফর্ম এনার্জি নামে একটি পানীয়।
ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন তার নিজস্ব ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ও মিম কয়েন চালুর কথা। এসব কিছু মিলিয়ে, সেনাবাহিনী, করপোরেশন ও ট্রাম্প ব্র্যান্ড যেন এক ছাদের নিচে মিশে গেছে এই সামরিক মহড়ায়।
ফাঁকা মাঠ আর নীরব জনতা—বিরাট আয়োজনের বিপরীতে এক অস্বস্তিকর বাস্তবতা
যে প্যারেডের জন্য ওয়াশিংটনের বহু রাস্তা বন্ধ করা হয়, যার ব্যয় প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে—সেই আয়োজনে গ্যালারির বহু আসনই ছিল ফাঁকা। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস ২.৫ লাখ মানুষের অনুমতি দিলেও বাস্তবে তা পূরণ হয়নি।
ট্যাংক যখন রাস্তা দিয়ে গড়ায়, তখন আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের মুখে ছিল না উল্লাস, কানে ছিল না করতালি। বরং একজন এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারী এমন একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে ট্যাংকগুলো এতটাই নিঃশব্দে চলছিল, যেন মনে হচ্ছিল মল থেকে বের হওয়া কোনো নরম চাকার ট্রলি।
অন্যদিকে রাজপথে মানুষ, 'নো কিংস' ডে তে বিক্ষোভের উত্তাল ঢেউ
সেই সময়েই, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজার হাজার মানুষ পালনে ব্যস্ত ছিলেন 'নো কিংস ডে'। প্রায় ২ হাজার স্থানে বিক্ষোভ হয়। এর অন্যতম বড় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় লস অ্যাঞ্জেলেসে। এখানে ২০ হাজারের বেশি মানুষ জমায়েত হন।
দিনের বেশিরভাগ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের থেকে দূরে ছিল। তবে রাতের দিকে আটলান্টায় ছোড়া হয় টিয়ার গ্যাস, গ্রেপ্তার করা হয় আটজনকে। লস অ্যাঞ্জেলেসেও শেষ পর্যন্ত পুলিশ ঘেরাও করে ফেলে বিক্ষোভস্থল। এ সময় বিনা নোটিশে ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ও স্মোক গ্রেনেড ছোরা হয়।
এই সব কিছু মিলিয়ে, দিনটি যেন ছিল দুই আমেরিকার গল্প: একদিকে জন্মদিনের ছুতোয় অস্ত্র, সামরিক শো-ডাউন, ও প্রোপাগান্ডা। অন্যদিকে রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকা নাগরিকরা, যারা বলছিলেন, 'আমরা রাজা চাই না'।