ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘গোপন’ নথি হাতানোর দাবি ইরানের; ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ

চিরশত্রু ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত বিভিন্ন 'গোপন' নথি ও ফুটেজ সম্প্রচার করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে ইরান।
বুধবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক প্রামাণ্যচিত্রে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। যদিও ইসরায়েল তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বরাবরই অস্পষ্টতার নীতি বজায় রেখেছে; তারা কখনো এ ধরনের কর্মসূচির অস্তিত্ব স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি।
ইরানের টেলিভিশনে প্রচারিত ওই প্রামাণ্যচিত্রে ইসরায়েলি বিজ্ঞানীদের পাসপোর্টের কপি এবং বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটির অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য দেখানো হয়। এমনকি দক্ষিণ ইসরায়েলের ডিমোনা পারমাণবিক চুল্লির ভেতরের কিছু ফুটেজও সম্প্রচার করা হয়। ধারণা করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরায়েলের কাছেই অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তবে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তারা ইরানের এসব দাবির সত্যতা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী ইসমাইল খাতিব দাবি করেন, গত জুনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওই মাসে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হামলা চালানো হয়েছিল। যুদ্ধের আগে থেকেই ইরানি কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন যে, তারা ইসরায়েলের পারমাণবিক ও সামরিক ঘাঁটি সংক্রান্ত হাজার হাজার গোপন নথি জোগাড় করেছেন।
প্রামাণ্যচিত্রে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসির কিছু ব্যক্তিগত ছবিও প্রকাশ করা হয়। একটি ছবিতে তাকে 'মিনি মাউস' পোশাক পরা একজনের সঙ্গে চুম্বনরত অবস্থায় দেখা যায়। ইরানের দাবি, গ্রোসির ওপর গোয়েন্দাগিরি করে ইসরায়েল এই ছবিগুলো সংগ্রহ করেছে এবং এর মাধ্যমে সংস্থাটিকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে।
গত জুনে ইসরায়েল ইরানে অতর্কিত হামলা চালায়, যা ১২ দিনের যুদ্ধে রূপ নেয়। এরপর থেকেই ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আইএইএ এবং এর পরিচালকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছে। তেহরানের অভিযোগ, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও সংস্থাটি তার কোনো নিন্দা জানায়নি।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তেহরানের উত্তেজনা আবারও বাড়ছে, এমন এক সময়ে এই প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচারিত হলো। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
অন্যদিকে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। বছরের পর বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের ছায়াযুদ্ধ চলছে, যার অংশ হিসেবে তেহরান বহু কথিত গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের হত্যা ও অন্তর্ঘাতের অভিযোগ এনেছে।