মাথা, গলার ক্যান্সার: ইমিউনোথেরাপি ওষুধ ব্যবহারে সাফল্য, নতুন করে আক্রান্তের সম্ভাবনা কমছে

উন্নত পর্যায়ের মাথা ও গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্যান্সার পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমছে—এমন তথ্য দিচ্ছে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। গবেষকরা বলছেন, এটি সম্ভব হয়েছে ইমিউনোথেরাপি ওষুধের কারণে। খবর বিবিসি'র।
গত দুই দশকে এই ধরনের জটিল ক্যান্সারের চিকিৎসায় এটিই প্রথম বড় অগ্রগতি বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।
ডার্বিশায়ারের ৪৫ বছর বয়সী লরা মার্সটন ছয় বছর আগে উন্নত পর্যায়ের জিভের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর চিকিৎসকরা তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা 'ভয়াবহ' বলেছিলেন। তখন তিনি ভাবেননি এতদিন বেঁচে থাকবেন। তিনি বলেন, 'আমি বিস্মিত যে এখনো বেঁচে আছি।'
লরা অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে ইমিউনোথেরাপি নিয়েছিলেন। গবেষকদের মতে, এই চিকিৎসা শরীরকে ক্যান্সার ফিরে এলে তা শনাক্ত করে ধ্বংস করতে শেখায়।
মাথা ও গলার ক্যান্সার সবচেয়ে কঠিন রোগগুলোর একটি। গত দুই দশকে এর চিকিৎসায় বড় পরিবর্তন হয়নি। উন্নত পর্যায়ের রোগীদের অর্ধেকের বেশি পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যায়।
২০১৯ সালে লরার জিভে একটি ক্ষত দীর্ঘদিন সারেনি, তখন ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, পাঁচ বছর বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ৩০ শতাংশ।
লরাকে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করতে হয়—জিভ কেটে ফেলতে হয়, গলার লিম্ফ নোডও সরানো হয়। এরপর নতুন করে কথা বলা ও খাওয়া শিখতে হয়। 'তখন আমার বয়স ৩৯, পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম,' বলেছিলেন তিনি।
লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় ৩৫০ জনের বেশি রোগীকে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে 'পেম্ব্রোলিজুমাব' নামের ইমিউনোথেরাপি দেওয়া হয়, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
গবেষণার প্রধান অধ্যাপক কেভিন হ্যারিংটন বলেন, 'আমরা রোগীর প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিউমার পর্যবেক্ষণে সক্ষম করি, যাতে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এরপর টিউমার অপসারণের পর এক বছর ধরে ওষুধ দিয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা হয়।'
একই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত আরেক দলে প্রচলিত চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের ক্যান্সার শরীরের অন্য কোথাও ছড়ায়নি।
নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির ফলাফল ইতিবাচক। রোগমুক্ত থাকার গড় সময় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় আড়াই বছর থেকে পাঁচ বছর হয়েছে।
তিন বছর পর দেখা যায়, যারা পেম্ব্রোলিজুমাব নিয়েছেন, তাদের শরীরে ক্যান্সার ফিরে আসার ঝুঁকি ১০ শতাংশ কমে গেছে।
ছয় বছর পেরিয়ে আজও লরা সুস্থ আছেন। তিনি বলেন, 'আমি এখন ভালো আছি, খুব ভালো আছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এটা আমার জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা, কারণ আমি এখন এখানে, আপনার সঙ্গে কথা বলছি। আমার এতদূর আসার কথা ছিল না।' জিভ কেটে ফেলার পর ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে বাঁ হাতের পেশি মুখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। পথটা ছিল কঠিন।
লরা বলেন, 'এই অসাধারণ ইমিউনোথেরাপি আমাকে আবার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে।'
গবেষকরা বলছেন, সফলতার কারণ হলো অপারেশনের আগে ওষুধ দেওয়া, যা শরীরকে ক্যান্সার ফিরে এলে তা শনাক্ত ও ধ্বংস করতে শেখায়।
প্রফেসর হ্যারিংটন বলেন, 'ইমিউনোথেরাপি এই রোগীদের জন্য বিশ্বকে বদলে দিতে পারে। এটি ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়ানোর সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়, যা একবার ছড়িয়ে গেলে চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন।'
যুক্তরাজ্যে বছরে প্রায় ১২,৮০০ জনের নতুন মাথা ও গলার ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এই পদ্ধতি 'বিশেষ কিছু রোগীর জন্য ভালো কাজ করেছে', তবে প্রফেসর হ্যারিংটন বলেন, ট্রায়ালে অংশ নেওয়া সকল রোগীর ক্ষেত্রেই সুফল পাওয়া 'অত্যন্ত আনন্দদায়ক'। তিনি যোগ করেন, এখন এটিকে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় দেওয়া উচিত।
গবেষণার ফলাফল আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি (এএসসিও) এর বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে।
'কি নোট' নামের পরীক্ষায় ২৪ দেশের ১৯২টি হাসপাতাল অংশ নিয়েছিল। এটি পরিচালনা করেছে সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল স্কুল এবং অর্থায়ন করেছে ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এমএসডি।