হাসপাতাল যখন যুদ্ধক্ষেত্র: ত্রিপুরার ফলবাগানে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের প্রথম হাসপাতাল
সময় তখন সন্ধ্যা ছয়টার মতো। সুলতানা কামাল ও তার বোন সাঈদা কামাল সোনামুড়া ফরেস্ট বাংলোর সামনে এসে দাঁড়ালেন। এই বাংলোরই মাঝখানের একটি ঘরে এক গাদা ওষুধের বাক্স নিয়ে থাকতেন ক্যাপ্টেন আখতার আহমেদ। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা আগরতলার এই সোনামুড়া তখন মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের প্রধান আশ্রয়স্থল।
একাত্তরের দিন যত গড়াচ্ছিল, আহতের সংখ্যাও তত বাড়ছিল। রণক্ষেত্র থেকে আসা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতেই ক্যাপ্টেন আখতার আহমেদ ফরেস্ট বাংলোর একটি ঘরে এসে ওঠেন। কিন্তু কেবল ওষুধ দিয়ে তো আর চিকিৎসা হয় না; প্রয়োজন ছিল অপারেশন টেবিল ও সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতির মতো সরঞ্জাম। বিশেষ করে ৯ মে কুমিল্লার বিবির বাজারের যুদ্ধের (চৌদ্দগ্রাম সংলগ্ন ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা) পর একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি করে অনুভূত হয়।
তাই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনতে আখতার আহমেদ তখন নিজের জীবন বাজি রেখে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েন বাংলাদেশের ভেতরে। কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নেন। নিজেই সেই অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে নিয়ে আসেন সোনামুড়ায়। এভাবেই একটি মাত্র ঘর আর জোড়াতালি দেওয়া সরঞ্জাম নিয়ে শুরু হয় এক ঐতিহাসিক হাসপাতালের যাত্রা।
গোয়ালঘর থেকে শুরু
তবে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়েছিল আরও আগে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শ্রীমন্তপুরের একটি গোয়ালঘরে। ক্যাপ্টেন আখতার আহমেদ মেজর খালেদ মোশাররফের সঙ্গে পরামর্শ করে আগরতলার শ্রীমন্তপুর এলাকায় আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই উদ্যোগ নেন। উপযুক্ত কোনো স্থাপনা না পেয়ে তিনি একটি পরিত্যক্ত গোয়ালঘর পরিষ্কার করেন। এরপর ইটের ওপর কাঠের তক্তা বিছিয়ে রোগীদের বিছানা বানিয়ে শুরু হয় প্রাথমিক চিকিৎসা।
কিন্তু সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ করলে, বাধ্য হয়ে পিছু হটে সোনামুড়ায় চলে আসেন তারা। সেখানে আগে থেকেই চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন ডা. নাজিমুদ্দীন আহমেদ। ক্যাপ্টেন আখতার তার সঙ্গে যুক্ত হন এবং স্থানীয় বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে হাসপাতালটিকে ফরেস্ট বাংলোর একটি ঘরে স্থানান্তর করেন।
এক ঘরের হাসপাতাল
সেই এক চিলতে ঘরের এক পাশে একটি অপারেশন টেবিল ও ওষুধের র্যাক। অন্য পাশে মেঝেতে ছয়-সাতটি চাটাই বিছানো। বালিশ ছিল না, তাই রোগীরা সঙ্গে যেসব কাপড়চোপড় নিয়ে আসতেন সেগুলোই মাথার নিচে জড়ো করে শুয়ে পড়তেন।
কারও অবস্থা গুরুতর হলে পাঠানো হতো আগরতলার গোবিন্দবল্লভ হাসপাতালে। সেখানেও জায়গার সংকুলান হত না অনেক সময়। একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকায় অধিকাংশ সময় আহতদের টুকরি বা পিঁড়িতে বসিয়ে চার-পাঁচজন মিলে কাঁধে করে নিয়ে আসতেন। ডা. আখতার আহমেদের সঙ্গে সেবাদানকারী হিসেবে তখন ছিলেন পাকিস্তান আর্মি মেডিকেল কোরের কয়েকজন নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ও কর্মচারী।
কিন্তু দিন দিন রোগীর চাপ বাড়লে স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশেষ করে রোগীদের দেখভালের জন্য সাহসী ও দক্ষ জনবলের অভাব মেটাতে আখতার আহমেদ তার স্ত্রী খুকুকে নিয়ে আসেন। এরপর যোগ দিলেন কবি সুফিয়া কামালের দুই মেয়ে সুলতানা কামাল ও সাঈদা কামাল। চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে তাদের ধারণা তো নে-ই, উলটো রক্তমাখা শরীর দেখলেও গা শিরশির করে—এমন ছিল অবস্থা। আখতার আহমেদ তাদের অভয় দিতেন এবং কাজগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখতে বলতেন। যন্ত্রপাতিগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে ধীরে ধীরে তিনি তাদের রক্তচাপ মাপা, ক্ষত জীবাণুমুক্ত করা, ইনজেকশন দেওয়া ও ব্যান্ডেজ করার মতো প্রাথমিক সেবার কাজগুলো শিখিয়ে দেন। উদ্দেশ্য ছিল, বড় অস্ত্রোপচারের বাইরে অন্যান্য কাজগুলো যেন তারাই সেরে ফেলতে পারেন।
ওদিকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে পরিস্থিতি দিন দিনই খারাপ হচ্ছে। আশপাশের গেরিলা বাহিনীগুলোও সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। ক্রমাগত বাড়ছে আহতদের সংখ্যা। সোনামুড়ায় কেবল যুদ্ধাহতরাই নয়, বরং জ্বর, ম্যালেরিয়া ও আমাশয়ে আক্রান্ত রোগীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। ফলে এমন জরাজীর্ণ অবস্থায় হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো বেশিদূর চালানো যাচ্ছিল না।
ওষুধ আনতে শত্রুর মুখে
প্রাথমিকভাবে ১০ জন নার্স হলেই চলবে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে জনবল আরো দরকার হয়ে পড়ে। একে একে যুক্ত হলেন মেডিকেল শিক্ষার্থী ডালিয়া, শামসুদ্দীন ও সবিতা। ঢাকা নার্সিং স্কুলের ছাত্রী পদ্মা আগে থেকেই সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন।
হাসপাতালটির আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্যের যোগান দিতেন ডা. মোবিন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো চিকিৎসকেরা। বিলেতে প্রবাসী বাঙালি চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত 'বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন' এই কার্যক্রমের নেপথ্যে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করছিল। তারা মাঝেমধ্যে দেশে এসে প্রয়োজনমতো কাজও করে যেতেন।
সবার একটাই চিন্তা ছিল কী করে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল দাঁড় করানো যায়। কারণ সোনামুড়া থেকেই অন্যান্য সব সেক্টরে ওষুধ সরবরাহ করা হতো, ফলে দ্রুত মজুদ ফুরিয়ে আসত। জরুরি প্রয়োজনে পাক বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে ওষুধ সংগ্রহ করতে হতো। একপর্যায়ে পাকবাহিনী হাসপাতালের অবস্থান জেনে ফেলে এবং লক্ষ্য করে অবিরাম শেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
কামানের গোলার বিকট শব্দে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, লোকজনের চিৎকার, ছোটাছুটি—যে যেমন পারছে নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে পড়ে। কিন্তু রোগীদের কী হবে? তারা তো নড়তে পারবেন না। তাই অসহায় রোগীদের রেখে ডাক্তার ও নার্সরা পিছু হটলেন না।
পোকার ভয়ে কানে তুলো
শেলিং থামলে হাসপাতাল কর্মীরা সবকিছু গুছিয়ে চলে যান আরও কিছুটা ভেতরে 'দারোগা বাগিচায়', যা ছিল মেলাঘর হেডকোয়ার্টার থেকে প্রায় দেড় মাইল দূরে। সেখানে তাঁবুর নিচে শুরু হয় নতুন হাসপাতাল। রোগীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাঁবুর সংখ্যাও বাড়ল। কিন্তু জঙ্গলঘেরা এলাকা হওয়ায় পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিল বর্ণনাতীত। কানে পোকা ঢোকার ভয়ে রাতে কানে তুলো দিয়ে ঘুমাতে হতো। বৃষ্টি হলে তাঁবুর ভেতর পানি ঢুকে যেত, ছিল বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির চরম সংকট। এভাবেই জুলাই ও আগস্ট মাস প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কাটল।
এরই মধ্যে হাসপাতাল তৈরির কাজ ধীরে ধীরে এগোতে থাকলো। বাংলাদেশ সরকার হাসপাতালের জন্য ৫০ হাজার টাকা মঞ্জুর করে। শুরু হয় মেলাঘর থেকে পাঁচ মাইল দূরে বিশ্রামগঞ্জে নিজস্ব ঘর তৈরির কাজ। মেলাঘরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাবুল ব্যানার্জি তার একটি ফল বাগান এই হাসপাতালের জন্য ছেড়ে দেন। সেই বাগানেই গড়ে ওঠে বাঁশের তৈরি ঘর দিয়ে তৈরি 'বাংলাদেশ হাসপাতাল'।
এই সময়ে মিনু বিল্লাহ (পরবর্তীতে মিনু হক) তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'শর্ত ছিল বাগানের কোনো গাছ কাটা যাবে না। হাবুল ব্যানার্জি নিজেই আমাদের জন্য তার বাগানের ফলফাকড়া নিয়ে আসতেন; বিশেষ করে বড় বড় আনারস, পেয়ারা খেয়েই তো আমরা ফুলে গেছি (হেসে দেন)!'
প্লাস্টিকের ঘেরাটোপে অস্ত্রোপচার
আগস্টের শেষদিকে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০-এ। আর রোগীর সংখ্যা তখন ২৫। বাঁশের চারটি খুঁটির ওপর মাচা বেঁধে রোগীদের বিছানা তৈরি হতো। প্লাস্টিক দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল একটি কক্ষ, যেখানে হতো অস্ত্রোপচার। কেবল দিনের বেলাতেই অস্ত্রোপচার হতো; এমনকি কখনো কখনো চেতনানাশক হিসেবে ক্লোরোফর্ম দিয়েই কাজ সারতে হয়েছে। রাতে কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে হারিকেন, হ্যাজাক লাইট কিংবা টর্চলাইটের আলোই ছিল একমাত্র ভরসা।
একবার এক মুক্তিযোদ্ধার পা মাইন বিস্ফোরণে উড়ে যায়। পায়ে তৈরি হয়েছিল ভয়াবহ ক্ষত। খুকু, মিনু দুজনেরই এই ছেলেটির কথা স্পষ্ট মনে আছে। তারা জানান, অসহ্য ব্যথায় সে 'আপা আপা' বলে কাঁদত এবং তাদের হাতেই চিকিৎসা করাতে চাইত। বলতো, 'আপারা ব্যাথা দিবেনা। অনেক যত্ন নিয়ে করবেন।' কিন্তু আমরা যেতে পারতাম না গন্ধে। আমাদের যেতে বারণও করা হয়েছিল। যুদ্ধের পর দীর্ঘ সময় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর যখন মিডিয়াতে তার মৃত্যুর খবর আসে, তখন তারা জানতে পারেন সেই ছেলেটিই মারা গেছে।
পুরুষ কর্মীদের থাকার জন্য ছিল তাঁবু এবং ব্যবহার্য আসবাব হিসেবে ছিল সামান্য কিছু বাঁশের টুল ও টেবিল। আর কাপড়চোপড় ও ওষুধপত্র রাখার জন্য কয়েকটি র্যাক। কাপড়চোপড় তেমন ছিলও না। তেল সাবানের মতো কিছু কিনতে হলে লোকজনদের দিয়ে বাজার থেকে নিয়ে আসতেন। নির্ধারিত সময়ে ডিউটি, এরপর অবসরে কাপড়-চোপড় গোছাতেন, রান্না করতেন, পেপার পড়তেন, সবাই মিলে একসাথে বসে চা খেতেন, গল্প করতেন। কখনো মাঝরাতে রোগী এলে দ্রুত ছুটে যেতে হতো। টিলার নিচের পুকুরটিতে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি গোসলখানাই ছিল ভরসা। সেই পুকুরের পানিই ট্যাবলেট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পান করা হতো।
আখতার-খুকুর বিবাহবার্ষিকী
হাসপাতালে আলাদা রান্নাঘর ছিল। কিন্তু খাবারে থাকতনা আমিষের কোনো ছিটাফোঁটা। ভাতের চালে থাকত সাদা সাদা পোকা। মাছ-মাংসের অভাব মেটাতে মাঝেমধ্যে ক্যাপ্টেন গাফফার যুদ্ধক্ষেত্রের ব্যস্ততার মাঝেও রোগীদের জন্য মাছ পাঠাতে ভুলতেন না।
কঠিন সেই দিনগুলোতেও তারা ছোটখাটো উৎসবে আনন্দ খুঁজে নিতেন। মিনু হক মনে করেন শবেবরাতের সেই হালুয়া তৈরির কথা। এমনকি সবাই মিলে ক্যাপ্টেন আখতার ও খুকুর বিবাহবার্ষিকীও পালন করেছিলেন। সেদিন ভালো রান্না হয়েছিল। মিনুরা সবাই মিলে কাগজ দিয়ে কার্ড বানিয়ে আখতার-খুকুকে উপহার দিয়েছিলেন। প্রজেক্টরে সবাই মিলে 'পথের পাঁচালী' দেখেছিলেন সেদিন। মিনুর ঐ প্রথম 'পথের পাঁচালী' দেখা।
১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল
বিশ্রামগঞ্জে স্থানান্তরের পর হাসপাতালের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ডা. মোবিন ও ডা. নাজিম। যুক্ত হন ফারুক মাহমুদ, গেরিলা বাহিনীর সদস্য জাকিয়া খাতুন ও শাহাদাত চৌধুরী (প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও শিল্পী) সহ আরও অনেকে। এসেছেন ফতেহ আলী, শাহাদাত চৌধুরীর ছোট ভাই ও মেডিক্যালের ছাত্র মুর্শেদ চৌধুরী এবং স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল্লাহর পরিবার। সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ এলেন দু'বোন—আসমা নিসার ও রেশমা আমিন। আরও কিছুদিন পর যুক্ত হলেন অনুপমা, নীলিমা, মধুমিতা, কল্পনা, আলো। যুক্ত হলেন, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র কিরণশংকর দেবনাথ, লুৎফর, কাশেমও।
সোনামুড়ার সেই এক কক্ষের ঘরটি বিশ্রামগঞ্জে এসে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ নেয়। যেখানে ছিল ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড, প্যাথলজি ল্যাবরেটরি এবং মেডিকেল ইনভেস্টিগেশন রুম। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যোগ দেওয়ার পর হাসপাতালের পরিধি ও দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পায়। সেপ্টেম্বরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম। ২০২২ সালের ২৬ মার্চ 'প্রথম আলো'র একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অক্টোবর মাস নাগাদ এই হাসপাতালে ছয়জন ডাক্তার, চারজন শেষ বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং ১৮ জন স্বেচ্ছাসেবী নার্স কর্মরত ছিলেন।
বিজয়ের কৃতিত্ব দিতে হবে হাসপাতালটিকেও
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, যন্ত্রপাতি ও ত্রাণ সংগ্রহের কাজ সমন্বয় করতেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন পর্যন্ত ডা. আখতার, ডা. নাজিম, ডা. সিতারা এবং ডা. মোবিন নিরলসভাবে এই হাসপাতালের হাল ধরেছিলেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে স্ট্রেচারে করে সাব-সেক্টর মেডিকেল সেন্টারে আনা হতো। বড় জখম থাকলে পাঠানো হতো বিশ্রামগঞ্জের মূল হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা হাতের কাছে যা আছে তা দিয়েই অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছেন। মশারির কাপড় কেটে ব্যান্ডেজ বানানো, কামারের দোকান থেকে 'টমাস স্প্লিন্টার' তৈরি করে পা না কেটে ভাঙা পায়ের চিকিৎসা করেছেন; আবার, আঙুল বড়শির মতো বাঁকা করে ফুসফুস থেকে গুলি বের করে আনার মতো অসাধ্য সাধন করেছেন তারা।
সেই চরম প্রতিকূলতায় মানুষের জীবন বাঁচানোই ছিল তাদের একমাত্র ব্রত। আর এভাবেই মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত একদল চিকিৎসক, নার্স ও তরুণ প্রাণের হাত ধরে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম হাসপাতালের বীরত্বগাঁথা।
