হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনা সাময়িকভাবে আটকে দিলেন আদালত

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন দেশটির আদালত। শুক্রবার বোস্টনের একটি আদালতে এ আদেশ দেন বিচারক অ্যালিসন বারো।
বিচারকের এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ হাভার্ডের ৭ হাজারে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে, যারা এই নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হতেন। হাভার্ড এই নীতিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও অন্যান্য ফেডারেল আইনের 'স্পষ্ট লঙ্ঘন' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে, এটি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের জন্য 'তাৎক্ষণিক ও ধ্বংসাত্মক' প্রভাব ফেলবে।
৩৮৯ বছর পুরোনো এ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মামলায় উল্লেখ করেছে: 'বিদেশি শিক্ষার্থী ছাড়া হাভার্ড, হাভার্ড নয়।' বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ।
হাভার্ড অভিযোগপত্রে বলেছে, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তির প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে, ফলে 'অগণিত' একাডেমিক প্রোগ্রাম, ক্লিনিক, কোর্স এবং গবেষণা ল্যাবরেটরি বিপর্যস্ত হবে, যা মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সমাপ্তির দিকে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে 'প্রকাশ্য প্রতিহিংসা' এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ হিসেবে দেখিয়েছে।
এই মামলার শুনানি ২৭ ও ২৯ মে ধার্য করেছেন বিচারক অ্যালিসন বারো। তিনি বারাক ওবামার সময় নিয়োগপ্রাপ্ত। একইসঙ্গে তিনি হাভার্ডের অনুদান মামলাটিও তদারকি করছেন।
হাভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটিকে জানিয়েছেন, 'প্রশাসন অবৈধভাবে আমাদের কারিকুলাম, শিক্ষক এবং ছাত্রদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সরকারের প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের অংশ।'
এটি ট্রাম্প প্রশাসন এবং হাভার্ডের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়, আইন সংস্থা, সংবাদমাধ্যম, আদালত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তার রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে চাপে রেখেছেন। রিপাবলিকানরা বহুদিন ধরেই শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বামপন্থী পক্ষপাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছে।
এর আগেও হাভার্ড প্রশাসনের কাছ থেকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের সরকারি অনুদান পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন হাভার্ডের কর-মুক্ত মর্যাদা বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে, এর দানকৃত তহবিলের ওপর কর বৃদ্ধি করেছে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।
হাভার্ড জানিয়েছে, ২০২৪ সালে তাদের বিদেশি শিক্ষার্থীর এক-পঞ্চমাংশ চীন থেকে এসেছে। মার্কিন আইনপ্রণেতারা উভয় পক্ষের সমর্থনে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চীনা সরকারের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে চীনা শিক্ষার্থী সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণ ও একাডেমিক স্বাধীনতা দমন করা।
একইসঙ্গে হাভার্ড ইহুদিবিদ্বেষ রোধ এবং নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
এর বিপরীতে, ট্রাম্প প্রশাসন ইহুদিবিদ্বেষ রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান বাতিল করার পর—বিশ্ববিদ্যালয়টি ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে নীতিমালা পরিবর্তন এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কোর্সের কারিকুলাম পর্যালোচনায় সম্মত হয়েছে।