ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হওয়ার মাঝেই গাজা ও ইয়েমেনে হামলা জোরদার করল ইসরায়েল

শুক্রবার (১৬ মে) গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতে অন্তত ১০৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এসব হামলাকে হামাসকে জিম্মি মুক্তির জন্য চাপে রাখার এক নতুন কৌশলের সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
এছাড়া, ইয়েমেনের দুটি বন্দরেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, হুথি বিদ্রোহীরা ওই বন্দরগুলো অস্ত্র পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছিল। স্থানীয় স্বাস্থ্য সূত্র জানায়, ওই হামলায় অন্তত একজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এর আগের কয়েক দিনের হামলায় ১৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনটি উপসাগরীয় রাষ্ট্র সফর শেষে ওই অঞ্চল ত্যাগ করেছেন। তবে তিনি ইসরায়েল সফর করেননি।
ট্রাম্পের এই সফর ঘিরে অনেকেই আশা করেছিলেন, হয়ত একটি যুদ্ধবিরতির সমঝোতা বা গাজায় মানবিক সহায়তা আবার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে; যা গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল বন্ধ করে রেখেছে।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস এবং ইয়েমেনের হুথিসহ একাধিক ইসরায়েলবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে ইরান।
সফরের শেষ দিনে আবুধাবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি গাজাসহ বৈশ্বিক নানা সংকট সমাধানে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা গাজার দিকে নজর দিচ্ছি।' তিনি আরও বলেন, 'এটা আমাদের সামলাতেই হবে। অনেক মানুষ না খেয়ে আছেন, অনেক খারাপ কিছু ঘটছে।'
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবারের বিমান হামলায় ৩১ শিশু ও ২৭ নারী নিহত হয়েছে। আরও বহু মানুষ আহত হয়েছে।
গাজার দক্ষিণে দেইর আল-বালাহ শহরের উপকণ্ঠ ও খান ইউনুস শহরে হামলা চালায় ইসরায়েল। তারা জানায়, সেখানে অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা ও সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
গাজার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবির ও বেইত লাহিয়া শহরে হামলার পর বহু মানুষ পালাতে শুরু করে। ইসরায়েল জানায়, তারা একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সক্রিয় বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
ইয়েমেনে হামলার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'আরও হামলা চালানো হবে।'
চলতি মাসের শুরুতেও হুথি অবস্থানে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা জানিয়েছে, ট্রাম্পের সফরের সময় ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের আকাশসীমার দিকে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা ভূপাতিত করেছে।
নতুন অভিযানের হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর
ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজায় সাম্প্রতিক হামলাগুলো আরও বড় অভিযানের প্রস্তুতির অংশ। তিনি বলেন, 'হামাস যদি এখনও গাজায় থাকা ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে শিগগিরই নতুন অভিযান শুরু হবে।' তিনি গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন।
সপ্তাহের শুরুতেই নেতানিয়াহু বলেন, 'হামাসকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করাই আমাদের লক্ষ্য।' তার দপ্তর থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়, 'ইসরায়েলি বাহিনী শিগগিরই পূর্ণ শক্তি নিয়ে গাজায় প্রবেশ করবে মিশন শেষ করতে।'
শুক্রবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ নিশ্চিত করেন, হামলাগুলোর লক্ষ্য ছিল গাজায় হামাসের সামরিক শাখার শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার। তবে তার ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি। তিনি গাজায় নিহত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই; যিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন।