ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের পর আলোচনার জন্য পুতিনকে তুরস্কে আসতে বললেন জেলেনস্কি

হাইলাইটস
- ১৫ মে তুরস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনা প্রস্তাব পুতিনের
- ক্রেমলিনের উপদেষ্টা রাশিয়ার পুরোনো শর্তে অটল থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন
- জেলেনস্কি, ইউরোপীয় নেতারা ও ট্রাম্পের দূত বলেছেন, আলোচনার আগে যুদ্ধবিরতি চান
- যুদ্ধবিরতির অপেক্ষা না করে জেলেনস্কিকে পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন ট্রাম্প
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি বৃহস্পতিবার তুরস্কে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রস্তুত আছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে তাকে অবিলম্বে পুতিনের সরাসরি আলোচনার প্রস্তাবে সম্মত হতে বলার পর তিনি এ কথা জানালেন।
ইউরোপের নেতারা জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করে সোমবার থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পর পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বললেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
তবে পুতিন আদৌ সশরীরে হাজির হবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে পুতিন ও জেলেনস্কির সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি।
জেলেনস্কি এক্স-এ লিখেছেন: 'বৃহস্পতিবার আমি তুরস্কে পুতিনের জন্য অপেক্ষা করব। ব্যক্তিগতভাবে । আশা করি, এবার রাশিয়ানরা অজুহাত খুঁজবে না।'
টেলিগ্রামে তার চিফ অভ স্টাফ আন্দ্রেই ইয়ারমাক লিখেছেন: 'পুতিন কী করবেন? তিনি কি ভয় পাচ্ছেন? দেখা যাক।'
এর আগে রোববার রাতে রুশ প্রেসিডেন্ট এক টেলিভিশন ভাষণে আগামী ১৫ মে বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানালেন।
ইউরোপের বড় শক্তিগুলোর শনিবার কিয়েভ সফরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুতিনের প্রস্তাবটি আসে। ওই সফরে ইউরোপীয় নেতারা পুতিনকে অবিলম্বে নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে বলেন—তা না হলে নতুন করে 'ব্যাপক' নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন। ট্রাম্পের ইউক্রেনবিষয়ক দূত কিথ কেলগও ইউরোপীয় নেতাদের এই অবস্থানকে সমর্থন দেন।
অবিলম্বে আলোচনায় বসতে বললেন ট্রাম্প
জেলেনস্কিও বলেছিলেন, মস্কো যদি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, তবে ইউক্রেন আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
কিন্তু ট্রাম্প—যার হাতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহায়তা চালু রাখা বা বন্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে—ভিন্ন সুরে কথা বলেন।
ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্প লেখেন, 'রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চান না, বরং রক্তগঙ্গা বন্ধের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার তুরস্কে বৈঠক করতে চান। ইউক্রেনের উচিত এতে তৎক্ষণাৎ সম্মত হওয়া।'
তিনি আরও লেখেন: 'তারা অন্তত বুঝতে পারবে কোনো সমঝোতা সম্ভব কি না। আর যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ইউরোপীয় নেতারা এবং যুক্তরাষ্ট্র জানবে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে আছে এবং সে অনুযায়ী এগোতে পারবে! বৈঠকে বসুন, এক্ষুনি!'
রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই ট্রাম্পকে কাছে টানতে চায়।
ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন ইউক্রেনকে যেভাবে সহায়তা দিয়েছেন, তা ফের নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে কিয়েভ। অন্যদিকে মস্কো আশা করছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে নিষেধাজ্ঞার বোঝা কিছুটা কমাতে পারবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। এ যুদ্ধ ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সংঘাত সৃষ্টি করেছে।
তবে রুশ বাহিনী অগ্রসর হলেও পুতিন এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো বড় ছাড় দেননি।
রোববার রাতের ভাষণে তিনি 'কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই সরাসরি আলোচনায়' বসার প্রস্তাব।
কিন্তু তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেমলিনের সিনিয়র উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় অবশ্যই ২০২২ সালে বাতিল করে দেওয়া খসড়া শান্তিচুক্তি এবং বর্তমান মাঠের বাস্তবতা—দুটোই বিবেচনায় আনতে হবে।
তার এই বক্তব্যের অর্থ: নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে কিয়েভ স্থায়ী নিরপেক্ষতা স্বীকার করতে হবে এবং রাশিয়ার দখলে থাকা তার ভূখণ্ডের অধিকার ছেড়ে দিতে হবে।
কিন্তু ইউক্রেন বলছে, ২০২২ সালের খসড়ার শর্ত অর্থ হবে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ।
'আল্টিমেটাম' প্রত্যাখ্যান পুতিনের
ইউক্রেন ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর যুদ্ধবিরতির দাবিগুলোকে 'আল্টিমেটাম' আখ্যা দিয়ে সেগুলো সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন পুতিন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আলোচনার আগে এই সংঘাতের মূল কারণগুলো নিয়ে কথা হওয়া জরুরি।
অন্যদিকে পুতিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন: 'এটা রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য দারুণ দিন হতে পারে!'
রাশিয়া এখনও এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। তবে জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের তরফ থেকে সোমবারের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এখনও বহাল আছে।
তিনি এক্সে লেখেন: 'কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজনীয় ভিত্তি দিতে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির অপেক্ষায় আছি, যা আগামীকাল থেকেই কার্যকর হবে।'
রাতের ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনও কোনো জবাব আসেনি। তবে রুশ বাহিনী যদি যুদ্ধবিরতি না মানে, তাহলে ইউক্রেনীয় সেনারাও পাল্টা জবাব দেবে।