ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্রের পেছনে আছে চীনের রোবট বাহিনী

চীনের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চীন তাদের আধুনিক প্রযুক্তির পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির একটি পুরনো ভিডিও নতুন করে সম্প্রচার করেছে।
গত বুধবার (৭ মে) পাকিস্তানে হামলার জবাবে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে ইসলামাবাদ। তার কয়েক ঘণ্টা পরই চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভিতে পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির অত্যাধুনিক রোবোটিক প্রক্রিয়ার একটি পুরনো ভিডিও পুনরায় সম্প্রচার করা হয়।
সিসিটিভি গত বছরের জুলাইয়ে প্রথম প্রচার করেছিল। ভিডিওটি গত বৃহস্পতিবার (৮মে) ফের প্রচারের পর চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই মনে করছেন এই ক্ষেপণাস্ত্র এখন স্বল্প ব্যয়ে ব্যাপকহারে উৎপাদন সম্ভব। আর সম্ভবত এটি দেশটির সামরিক রপ্তানি বাড়ানোর একটি ইঙ্গিতও।
ভিডিওটিতে দূরপাল্লার আকাশযুদ্ধে পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্রের (আকাশ থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি সংস্করণ, যা রপ্তানির জন্য তৈরি করা হয়েছে) কার্যকারিতা তুলে ধরা হয়।
ভিডিওতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ জানান, চীন তার সামরিক উৎপাদন ব্যবস্থায় 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি' ব্যবহার শুরু করায় এখন ২৪ ঘণ্টা কোনো মানবশক্তি ছাড়াই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সম্ভব। এই প্রযুক্তিব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। ফলে উৎপাদনের গতি যেমন বাড়ে, তেমনি খরচও কমে।
চীনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের (এভিআইসি)র বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম শাখার পরিচালক ইয়াও চ্যাংহং বলেন, 'চায়না এয়ারবোর্ন মিসাইল অ্যাকাডেমিতে আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রাংশ শনাক্ত, স্থাপন, ওয়েল্ডিং ও গুণগতমান পরীক্ষা করতে পারে। এখানে সমুদয় উৎপাদন প্রক্রিয়াই স্বয়ংক্রিয়।'
তিনি আরও বলেন, 'যখন এগুলো তৈরির কাঁচামাল প্রস্তুত থাকে এবং সফটওয়্যার সেট করা হয়, তখন পুরো প্রক্রিয়াটি মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজে থেকেই শুরু হয়ে যায়।'
গত বুধবার (৭ মে) পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ফ্রান্সের তৈরি রাফাল ও রাশিয়ার তৈরি সু-৩০এমকেআইসহ ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার করার দাবি ওঠে।
যদিও এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি, তবে সামরিক বিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ওয়ার জোনের এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে, পাকিস্তান চীনের তৈরি পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এতে বলা হয়, অন্তত দুইটি স্থানে এই ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা গেছে।
চীনের চতুর্থ প্রজন্মের এই পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের এআইএম-১২০সি/ডি ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা প্রায় ১২০ কিলোমিটার।
যুদ্ধের সময় পিএ-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্রটি জে-১০সিই ফাইটারের রাডারের সঙ্গে যুক্ত করা হলে এটি আরও অনেক দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। কারণ, এই রাডার ২৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করতে পারে।
ভিডিওতে আরও বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধবিমানকে নিরাপদ দূরত্ব থেকেই শত্রুর ওপর আঘাত হানার সুযোগ দেয়। এতে পাল্টা হামলার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং যুদ্ধবিমানের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে।
দূর থেকে আঘাত হানার সক্ষমতার কারণে হামলাকারী যুদ্ধবিমানটি নিরাপদ দূরত্বে থেকেই এ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে। ফলে শত্রুপক্ষ পাল্টা আঘাত করার আগেই এটি সরে যেতে পারে।
পাকিস্তানের হাতে চীনের মূল পিএল-১৫ সংস্করণ না থাকলেও, এর রপ্তানি সংস্করণ পিএলই-১৫ থাকার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চীনের পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমা সামরিক মহলের কাছে বহু বছর ধরেই আগ্রহের বিষয়। এটি চীনের সোভিয়েত-নির্ভরতা থেকে সরে এসে স্বনির্ভরতা অর্জনের প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।