যুক্তরাষ্টের কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়ে চীনের গোপন তালিকা

চীন ১২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিতে কিছু মার্কিন পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করেছে এবং তা নিয়ে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে গোপনে অবহিত করছে। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব কিছুটা প্রশমিত করতেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বেইজিং।
চীন এর আগেই কিছু ওষুধ, মাইক্রোচিপ ও বিমানের ইঞ্জিনসহ কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানাতে বলেছে, কোন কোন অপরিহার্য আমদানি পণ্যে তারা করছাড় চায়। তবে এই 'হোয়াইটলিস্ট' বা নির্দিষ্ট পণ্যের গোপন তালিকা এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি।
গোপন এই কৌশলের মাধ্যমে চীন প্রকাশ্যে আগ্রাসী মনোভাব বজায় রাখলেও পর্দার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিচ্ছে। যদিও সরকার বারবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ১৪৫ শতাংশ শুল্ক না তুললে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে, তবে এই তালিকা কার্যত এক ধরনের ছাড়।
তালিকায় কী ধরনের এবং কতগুলো পণ্য রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। দুই সূত্র জানিয়েছেন, চীন সরকার এখন পর্যন্ত তালিকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।
এর বদলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগতভাবে জানানো হচ্ছে, কোন কোন পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় প্রযোজ্য হবে। একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ওষুধ চীনে বিক্রি করেন এবং সোমবার শাংহাইয়ের পুডং কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই তালিকা সম্পর্কে জানিয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমরা এখনও অনেক প্রযুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।'
অন্য এক সূত্র জানায়, কিছু প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে তারা যেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে খতিয়ে দেখে, তাদের নির্দিষ্ট পণ্যগুলো এই শুল্কছাড় তালিকায় আছে কি না।
এছাড়া তালিকাটি ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে বলেও জানা গেছে। সম্প্রতি চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ইথেনের ওপর শুল্ক মওকুফ করেছে। রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রই এই কাঁচামালের একমাত্র সরবরাহকারী হওয়ায় বড় ইথেন প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিগুলো আগে থেকেই এই শুল্কছাড়ের আবেদন করে রেখেছিল।
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করছেন চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যচুক্তি শিগগিরই হতে যাচ্ছে। তবে সেটি 'ন্যায়সঙ্গত' হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে চীনের বাণিজ্য ও শুল্ক মন্ত্রণালয় এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে, চীনা কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব মূল্যায়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে বলেও জানিয়েছেন আরও দুটি সূত্র। এক সূত্র জানিয়েছেন, সম্প্রতি পূর্ব চীনে একটি বিদেশি ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে সরকার বলেছে, শুল্কের কারণে কী কী সমস্যা হচ্ছে তা জানাতে এবং প্রত্যেকটি ঘটনা আলাদাভাবে মূল্যায়নের জন্য তথ্য দিতে।
বৈঠকটি কোন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা প্রকাশ করেননি তিনি।
ফুজিয়ান প্রদেশের সিয়ামেন শহরের সরকারও গত রোববার টেক্সটাইল ও সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোকে একটি জরিপপত্র পাঠিয়েছে, যেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন পণ্য বাণিজ্য করে এবং দুই দেশের শুল্কনীতি তাদের ব্যবসায় কী ধরনের প্রভাব ফেলছে।