‘শুল্কবিরোধীরা বোকা!’: প্রত্যেক আমেরিকানকে ২,০০০ ডলার লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার সকালে এক পোস্টে প্রত্যেক মার্কিন নাগরিককে শুল্ক থেকে ২,০০০ ডলার 'ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ' দেওয়ার এক চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের ওপর নতুন করে ব্যাপক শুল্ক আরোপের জন্য তার জরুরি ক্ষমতা ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলার পরপরই এই ঘোষণাটি এলো।
ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, '(উচ্চ আয়ের লোক বাদে!) প্রত্যেক ব্যক্তিকে কমপক্ষে ২,০০০ ডলারের একটি লভ্যাংশ দেওয়া হবে।'
তবে ঠিক কারা এই অর্থ পাওয়ার যোগ্য হবেন বা কবে নাগাদ তা দেওয়া হতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাননি ট্রাম্প।
কিন্তু ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট রবিবার এবিসি-র 'দিস উইক' অনুষ্ঠানে ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই 'ট্যারিফ ডিভিডেন্ড' হয়তো সরাসরি নগদ অর্থ হিসেবে নাও আসতে পারে।
বেসেন্ট বলেন, '২,০০০ ডলারের এই লভ্যাংশ বিভিন্ন রূপে আসতে পারে। এটি কর হ্রাসের মাধ্যমেও হতে পারে, যা আমরা এখন দেখছি।'
প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেন যে, শুল্ক থেকে 'ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার' আয় হয়েছে এবং ৪০১(কে) অ্যাকাউন্টগুলো (এক ধরনের অবসর সঞ্চয়ী হিসাব) 'সর্বকালের সর্বোচ্চ' পর্যায়ে রয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, এই শুল্কের কারণে কোনো 'মুদ্রাস্ফীতি' হয়নি।
তিনি আরও লিখেছেন, 'যারা শুল্কের বিরুদ্ধে, তারা বোকা!'
তবে, কমিটি ফর আ রেসপন্সিবল ফেডারেল বাজেটের মতে, এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমদানি শুল্ক থেকে প্রায় ১৫১ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশা প্রকাশ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করবে।
প্রসঙ্গের খাতিরে উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর সময়ে পরিবারগুলোকে ২,০০০ ডলারের চেক পাঠানোর একটি প্রস্তাবের আনুমানিক ব্যয় ছিল প্রায় ৪৬৪ বিলিয়ন ডলার।
অতীতেও ট্রাম্প শুল্ক থেকে লভ্যাংশ দেবার ধারণা নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু গত মঙ্গলবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের অভাবনীয় জয়ের পরই তার কাছ থেকে এই নতুন ঘোষণা এলো, যেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় একটি বড় ইস্যু ছিল।
তবে, কংগ্রেসের উভয় কক্ষের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা আমেরিকানদের সরাসরি অর্থ প্রদানের বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাননি।
ওহাইও-র রিপাবলিকান সিনেটর বার্নি মোরেনো জুলাই মাসে সাংবাদিকদের সোজাসাপ্টা বলেছিলেন, 'এটি কখনোই পাস হবে না। আমাদের মাথায় ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ রয়েছে।'
গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টে শুল্ক সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মামলাটির শুনানিতে রক্ষণশীল বিচারপতিরা ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীকে তীব্র প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন, যা এই আশঙ্কা তৈরি করেছে যে উচ্চ আদালত হয়তো ট্রাম্পের তথাকথিত 'রেসিপ্রোকাল' এবং 'ট্র্যাফিকিং' শুল্ক বাতিল করে দিতে পারে।
মামলার মূল বিষয় হলো, 'ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট' ব্যবহার করে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, যা থেকে ২০২৫ অর্থবছরে সংগৃহীত প্রায় ১৫১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার এসেছে।
সুপ্রিম কোর্ট যদি এই আইনের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়, তবে ট্রাম্পের দলের কাছে অন্যান্য পথ, যেমন ১৯৭৪ সালের ট্রেড অ্যাক্টের ৩০১ ধারা ব্যবহারের সুযোগ থাকতে পারে। তবে সেই পথগুলো আরও জটিল এবং আদালতেও বাধার মুখে পড়তে পারে।
এছাড়াও, যদি ট্রাম্প এই মামলায় হেরে যান, তবে তার প্রশাসনকে সংগৃহীত শুল্ক ফেরত দিতে হতে পারে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের আরোপিত অন্যান্য শুল্ক, যেমন স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির ওপর আরোপিত শুল্কগুলো এই মামলার অন্তর্ভুক্ত নয়।
শুল্ক মামলাটির রায় আগামী জুনের শেষের আগে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
