যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ২০২৮ সালে আসছে বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক অভিধান ‘শব্দকল্প'

বাংলা ভাষার শব্দভান্ডারের উৎস, অর্থ, ব্যবহার ও বিবর্তনের ধারাবাহিকতাকে নথিভুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ঐতিহাসিক অভিধান তৈরির কাজ করছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ২০২৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এটি প্রকাশের লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা।
'শব্দকল্প' নামের এই প্রকল্পটির উদ্যোগ নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস (এসসিটিআর)। এটি বিশ্বে নন-ল্যাটিন লিপিতে রচিত প্রথম এই ধরণের অভিধান হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
প্রকল্প পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, "আমাদের লক্ষ্য ২০২৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি প্রকাশ করা। ওই বছরই অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির শতবর্ষ পূর্তি হবে। ঐতিহাসিক অভিধান তৈরির কাজ ফরাসি, জার্মান ও ডাচ ভাষায় চললেও, এখনও কোনও ভাষারই পূর্ণাঙ্গ ঐতিহাসিক অভিধান সম্পূর্ণ হয়নি।"
কী এই ঐতিহাসিক অভিধান?
ঐতিহাসিক অভিধান মানে শুধুমাত্র শব্দের অর্থ নয়; একটি শব্দ কবে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছে, কীভাবে তার বানান, অর্থ, এবং ব্যবহার পরিবর্তিত হয়েছে — এই সব তথ্য বিশ্লেষণ করেই তৈরি হয়, একটি ভাষার ঐতিহাসিক অভিধান। এটি ভাষাচর্চা, সাহিত্য বিশ্লেষণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে।
সাত বছরের কঠোর গবেষণা
২০১৭-১৮ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। ১০ জন গবেষকের একটি নিবেদিত দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সুকান্ত চৌধুরী ও সহ-পরিচালক সুবা চক্রবর্তী দাশগুপ্ত (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা), এই কাজ করছেন।
প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতারও দৃষ্টান্ত — যেখানে বাংলা, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ও স্কুল অফ ল্যাঙ্গুয়েজেস বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অর্থায়ন
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার অর্থ সহায়তা দিলেও, পরে এগিয়ে আসে গ্লোবাল যাদবপুর ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ফাউন্ডেশনসহ আরও অনেক শুভানুধ্যায়ী। সম্প্রতি, বিশেশ্বর চট্টোপাধ্যায় ট্রাস্ট— প্রকল্পটির বাকি সময়ের অর্থায়নের বড় অংশ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বাংলা ভাষার ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য এই প্রকল্পে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত।"
ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন গবেষকরা
প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে তা অনলাইনে প্রকাশিত হবে এবং নিয়মিত হালনাগাদের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন সুকান্ত চৌধুরী। তিনি বলেন, "যেমন অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি আজও হালনাগাদ হচ্ছে, তেমনই বাংলা অভিধানও হবে। তাই একটি স্থায়ী সেল অপরিহার্য।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা 'বিচিত্রা' প্রকল্পে (অনলাইন রবীন্দ্র রচনাবলি) দেখেছি, এমন কাজ টিকিয়ে রাখতে আলাদা 'ক্লাউড' সার্ভার বা 'মিরর সাইট' দরকার। শব্দকল্প-এর ক্ষেত্রেও তাই করা হবে।"
গবেষকদের মতে, বাংলা ভাষার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছে এই প্রকল্প।