‘ওলো’ নামে অদৃশ্য নতুন রঙ আবিষ্কারের দাবি মার্কিন বিজ্ঞানীদের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তাঁরা এমন এক নতুন রঙ আবিষ্কার করেছেন— যা মানুষ চোখ খালি চোখে দেখতে পারে না — তবে বিশেষ প্রযুক্তির সহায়তায় সেটি দেখা সম্ভব। রঙটির নাম রাখা হয়েছে "ওলো"।
গবেষকরা জানান, 'ওলো' রঙের অভিজ্ঞতা নেওয়া সম্ভব হয়েছে একটি বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে, যা 'দ্য উইজার্ড অব অজ' -এর অনুপ্রেরণায় তৈরি। এই প্রযুক্তিতে লেজার পালস সরাসরি চোখে নিক্ষেপ করে বিশেষ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে।
কী বলছে গবেষণা?
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা সম্প্রতি 'সায়েন্স অ্যাডভান্সেস' জার্নালে এই আবিষ্কারের বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা ব্যাখ্যা করেন, 'অজ' নামে একটি প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে, যা মানুষের দৃষ্টিশক্তিকে প্রতারিত করে এই নতুন রঙ দেখার অভিজ্ঞতা দেয়। উল্লেখ্য, ওজের জাদুকর গল্পে (দ্য ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অব অজ) শহরটিকে সবুজ দেখানোর জন্য বিশেষ চশমা ব্যবহার করা হয় — গবেষণার এই প্রযুক্তির নামকরণ সেই কল্পকাহিনির অনুপ্রেরণায়।
মানুষ কীভাবে রঙ দেখতে পায়?
মানব চোখে রেটিনায় তিন ধরনের ফটোসেন্সিটিভ কোষ বা 'কোণ সেল' রয়েছে — 'এস' কোণ নীল রঙের জন্য, 'এম' কোণ সবুজের জন্য এবং 'এল' কোণ লাল রঙের জন্য। এদের সংকেত মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে পৌঁছে গিয়ে— আমাদের রঙ দেখার অনুভূতি তৈরি করে।
কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় কোনও নির্দিষ্ট কোণ সেল এককভাবে সক্রিয় হয় না। 'এম' কোণ সবসময় কিছুটা 'এস' ও 'এল' কোণের সাথে ওভারল্যাপ করে কাজ করে। গবেষকরা ভাবছিলেন, যদি কেবলমাত্র 'এম' কোণগুলো সক্রিয় করা যায়, তাহলে কেমন রঙ দেখা যাবে?
কীভাবে ওলো আবিষ্কৃত হলো?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক রেন এনজি এবং অপ্টোমেট্রি বিভাগের অধ্যাপক অস্টিন রুরডা মিলে তৈরি করেন 'অজ' ডিভাইসটি। এটি অতি ক্ষুদ্র ডোজের লেজার ব্যবহার করে— একেবারে নির্দিষ্ট ফটোসেপ্টর কোষগুলিতে আলোক প্রক্ষেপণ করে।
২০১৮ সালে এই কাজ শুরু করেন ডক্টরাল ছাত্র জেমস কার্ল ফং, এবং পরবর্তীতে হান্না ডয়েল এই পরীক্ষা পরিচালনা করেন, যেখানে মানব বিষয়ীরা 'ওলো' দেখতে সক্ষম হন।
তাহলে ওলো কি সত্যিকারের নতুন রঙ?
বিজ্ঞানীদের মতে, 'ওলো' কোনো নতুনভাবে সৃষ্ট রঙ নয়; বরং এটি এমন এক রঙ যা চিরকালই ছিল, কিন্তু মানব চোখের সাধারণ ক্ষমতার বাইরে ছিল।
তবে সমাজভাষাতাত্ত্বিক দিক থেকে বলা যায়, এখন যদি মানুষ এই রঙকে আলাদাভাবে নামকরণ করে, তাহলে এটি নতুন রঙের মর্যাদা পেতে পারে।
কারা ওলো দেখেছেন?
আলোচিত সেই প্রযুক্তির সহায়তায় পাঁচজন ব্যক্তি — চারজন পুরুষ এবং একজন নারী — 'ওলো' দেখেছেন। তাঁদের সবার স্বাভাবিক রঙ দেখার ক্ষমতা রয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন গবেষণা নিবন্ধের সহলেখক এবং বাকিরা ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারের সদস্য।
ওলো দেখতেই বা কেমন?
যারা ওলো দেখেছেন, তারা একে গভীর সবুজ-নীল বা 'টিয়াল' রঙের সাথে তুলনা করেছেন — তবে এটি এতটাই প্রাণবন্ত যে স্বাভাবিক টিয়াল রঙ তার তুলনায় ম্লান মনে হয়।
অস্টিন রুরডা বলেন, "এটি ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত টিয়াল, যা সাধারণ সবুজ-নীল রঙের তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল।"
ওলো কি দৈনন্দিন প্রযুক্তিতে আসবে?
গবেষকরা জানিয়েছেন, ওলো রঙ এখনো স্মার্টফোন স্ক্রিন, টেলিভিশন বা ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তির নাগালের বাইরে। এটি দেখার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম প্রয়োজন।
বর্ণান্ধত্বের চিকিৎসায় কি ওজ প্রযুক্তি কাজে আসবে?
বার্কলের গবেষকরা সে সম্ভাবনা অনুসন্ধান করছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্তমান অবস্থায় ওজ প্রযুক্তিকে ছোট এবং সহজলভ্য করা কঠিন। এছাড়া রঙ অন্ধত্বের ধরন অনুযায়ী ফলাফল ভিন্ন হতে পারে।
মানুষ কীভাবে রঙ বোঝে?
রঙ উপলব্ধির তিনটি দিক আছে — শারীরিক (আলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য), স্নায়ুবৈজ্ঞানিক (চোখ ও মস্তিষ্কের প্রক্রিয়া) এবং সামাজিক-ভাষাগত (রঙের নামকরণ ও সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা)।
অন্যান্য প্রাণী রঙ কীভাবে দেখে?
মানুষের তুলনায় কিছু প্রাণী আরও বিস্তৃত রঙ দেখার ক্ষমতা রাখে। যেমন, ছোট প্রাণী ম্যান্টিস শ্রিম্প ১২টি রঙের চ্যানেল শনাক্ত করতে পারে এবং অতিবেগুনি ও মেরুকৃত আলোও দেখতে পারে। অন্যদিকে কুকুরেরা কেবল দুই রঙ (নীল ও হলুদ) দেখতে পায়।