ট্রাম্প ‘মনে করেন’ রাশিয়াকে ক্রিমিয়া ছেড়ে দিতে প্রস্তুত জেলেনস্কি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্রিমিয়া রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে রাজি হতে পারেন বলে তিনি মনে করেন। যদিও কিয়েভ এর আগে এমন কোনো প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। খবর বিবিসি'র।
২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট প্রস্তুত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, 'আমার মনে হয় তাই।'
তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে 'গুলিবর্ষণ বন্ধ করে, বসে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার' আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই লড়াইয়ের অবসান ঘটানো সম্ভব।
ভ্যাটিকান সফর শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। এর আগে, পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার আগে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন।
ট্রাম্প জানান, জেলেনস্কির সঙ্গে তার বৈঠক 'ভালো' হয়েছে এবং সেখানে 'খুব সংক্ষেপে' ক্রিমিয়া নিয়ে আলাপ হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, এখন জেলেনস্কিকে 'অধিক শান্ত' মনে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে দুই নেতার প্রকাশ্য বিবাদের প্রতি তিনি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি এমনটা বলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেন জানিয়ে এসেছে, যুদ্ধবিরতির আগে কোনো ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা হবে না এবং তারা কোনো এলাকা ছেড়ে দেবে না। তবে ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়ে এখনো প্রতিক্রিয়া দেননি জেলেনস্কি বা পুতিন।
এদিকে, জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াস সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেন যেন ব্যাপক ভূমি ছাড়ের কোনো চুক্তিতে রাজি না হয়। জার্মান টিভি চ্যানেল এআরডিকে তিনি বলেন, 'কিয়েভের উচিত নয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক প্রস্তাব পর্যন্ত গিয়ে সমঝোতা করা।' তার মতে, সেটি 'আত্মসমর্পণের' শামিল হবে।
পিস্তোরিয়াস বলেন, যুদ্ধ থামাতে কিছু ভূখণ্ড হারানোর ঝুঁকি আছে, তবে 'মার্কিন প্রস্তাবের মতো এত দূর' যাওয়া উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, 'এক বছর আগেই ইউক্রেন এই প্রস্তাবে যা ছিল তা পেতে পারত। এতে কোনো বিশেষ লাভ নেই।'
ট্রাম্প গত সপ্তাহে দাবি করেন, 'চুক্তির প্রধান প্রধান বিষয়গুলোতে একমত হওয়া গেছে।' বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার দখলে থাকা বহু এলাকা, এমনকি ক্রিমিয়াও ছাড়তে বলা হতে পারে। তবে বিবিসি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রস্তাবের নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেখেনি।
শুক্রবার রয়টার্স জানিয়েছে, তারা যে নথি দেখেছে তাতে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া এবং পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্কসহ দখলকৃত এলাকায় রুশ নিয়ন্ত্রণ মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রয়টার্স আরও জানিয়েছে, ইউরোপ ও ইউক্রেনের পাল্টা প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির পর দখলকৃত ভূমির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করার কথা বলা হয়েছে।
মার্কিন প্রস্তাবে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ বাতিলের কথাও আছে। এর পরিবর্তে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে 'ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট' যুদ্ধবিরতির পর ইউক্রেনের নিরাপত্তা দেবে, তবে এতে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না।
এদিকে ইউরোপীয়রা চাইছে, ইউক্রেন আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র যেন ন্যাটোর মতো শক্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়।
মার্কিন প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হবে, যাতে সেখান থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশই বিদ্যুৎ পায়। তবে ইউরোপ-ইউক্রেনের পাল্টা প্রস্তাবে রাশিয়াকে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলা হয়নি।
টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষার কারণেই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, 'ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গেই থাকবে।'
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রাশিয়া ও ইউক্রেনকে দ্রুত শান্তি চুক্তির দিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এনবিসিকে তিনি বলেন, 'এটা দ্রুত হওয়া উচিত। যদি কোনো ফল না আসে, তাহলে আমরা এই প্রচেষ্টায় আর সময় ও সম্পদ ব্যয় করতে পারব না।'
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে, অগ্রগতি না হলে তারা আলোচনার টেবিল থেকে সরে আসবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালায় এবং বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশ ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।