ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ভাটা: কমছে লাতিনো ভোটারদের সমর্থন

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে ফিরতে ভূমিকা রাখা হিস্পানিক (লাতিনো) ভোটারদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার পোর্টারভিলের বাসিন্দা, নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য অ্যান্তোনিও গনজালেস জুনিয়র, দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে নিজের বাড়িতে ২৪ ঘণ্টা আমেরিকান পতাকা ঝুলিয়ে রাখেন। ৬৬ বছর বয়সী এ অবসরপ্রাপ্ত সার্জিক্যাল টেকনোলজিস্ট স্বীকার করেছেন যে, ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু উদ্বেগ আছে তার। তবে তিনি প্রশাসনকে সময় দিতে প্রস্তুত, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে সরে এসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমানোর বিষয়ে।
"ভাল সময়ের আগে কঠিন সময় আসতেই হয়," মন্তব্য করেন মেক্সিকান-আমেরিকান গনজালেস, যিনি গেল নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন।
এদিকে রয়টার্স/ইপসোসের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের প্রতি লাতিনোদের সমর্থন ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অননুমোদনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ শতাংশে। উল্লেখ্য যে ট্রাম্প নভেম্বরের নির্বাচনে ৪৬ শতাংশ হিস্পানিক ভোট পেয়েছিলেন, যা ২০২০ সালের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট বেশি ছিল।
সমর্থনে ফাটল
সমর্থন সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতিতে সংশয় প্রকাশ করেছেন তার সমর্থকরাও। যেমন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার পক্ষে থাকা গনজালেস বলেছেন, কোনো ব্যক্তিকে বিচার ছাড়াই বিতাড়ন করা নিয়ে তার কিছু আপত্তি রয়েছে। "প্রক্রিয়াটি খোলামেলা হওয়া উচিত, গোপনে নয়," বলেন তিনি।
রয়টার্স/ইপসোসের ৬,০০০-এর বেশি উত্তর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যেই কমছে। জরিপগুলোর নমুনা ত্রুটির সীমা ছিল ২ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে।
'কিছু সমন্বয় দরকার'
টেক্সাসের সান অ্যান্তোনিও শহরের স্কুল কাউন্সেলর ক্যালেব গনজালেস (৪৯) মনে করেন, ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনের প্রধান ফোকাস ছিল অপরাধ এবং অভিবাসন। "কিছু কাজ ভালো হয়েছে, কিছু জায়গায় সমন্বয় দরকার। আমি দেখছি তিনি চেষ্টা করছেন এবং শিখছেন"- বলেন তিনি।
প্রায় সাড়ে ৬ কোটি আমেরিকান নিজেদের হিস্পানিক হিসেবে পরিচয় দেন, যাদের অধিকাংশই মেক্সিকো ও পুয়ের্তো রিকোসহ স্প্যানিশভাষী দেশগুলোর বংশদ্ভূত।
অর্থনীতিতে ট্রাম্পের ভূমিকা
"২০২৪ সালে রিপাবলিকানদের জন্য অর্থনৈতিক অসন্তোষই সহায়ক হয়েছিল, কিন্তু এখন অর্থনৈতিক উন্নতি অনুভূত না হওয়ায়— এটা রিপাবলিকানদের জন্য বিপদসংকেত," মন্তব্য করেন ক্লারিসা মার্টিনেজ দে ক্যাস্ত্রো, যিনি লাতিনো ভোট ইনিশিয়েটিভের প্রধান। তিনি বলেন, এখনকার বাস্তবতায় "ট্রাম্পই অর্থনীতির সর্বেসর্বা।"
একই সঙ্গে, অভিবাসন নীতির ব্যাপারেও লাতিনোদের মনোভাব স্পষ্ট: বিপজ্জনক অপরাধীদের বহিষ্কারে সমর্থন থাকলেও, অপরাধবিহীন দীর্ঘদিনের বসবাসকারী অনিবন্ধিত অভিবাসীদের টার্গেট করা উচিত নয় বলে তারা মনে করছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস বলেন, "ট্রাম্প লাতিনো আমেরিকানদের কাছ থেকে ঐতিহাসিক সমর্থন অর্জন করেছেন, যারা আমেরিকান স্বপ্নের পথে বাধা দূর করার জন্য তার ওপর আস্থাকে প্রতিফলিতে করেছিল।"
তবে সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতি হিস্পানিক সমর্থন ৪ পয়েন্ট কমে ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে।