কুরস্কের শেষ গ্রাম পুনরুদ্ধারের দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের পশ্চিমে অবস্থিত কুরস্ক পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে দাবি রাশিয়ার। তবে এই দাবি অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। খবর বিবিসির।
রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ভ্যালেরি গেরাসিমভ বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ গ্রামটিও এখন রুশ বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। তারা পুনর্দখল করেছে এটি। প্রায় আট মাস আগে হঠাৎ আক্রমণ করে এলাকাটি দখল করে নেয় ইউক্রেন।
বক্তব্যে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর 'বীরত্বের' প্রশংসা করেন ওই রুশ কর্মকর্তা। প্রথম বারের মতো রাশিয়া যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সহায়তার কথা প্রকাশ করেছে দেশটি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের প্রচেষ্টা 'সম্পূর্ণ ব্যর্থ' হয়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেন বলছে, তাদের সেনারা এখনো রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রাশিয়ার এসব দাবি 'প্রচারণার কৌশল' বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
৭০ হাজার রুশ সেনা ও ব্যাপক ড্রোন হামলার মুখে কুরস্ক থেকে পিছু হটেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
মার্কিন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) ২৫ এপ্রিলের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, "ওই এলাকায় ইউক্রেনকে পুরোপুরি হটাতে রুশ বাহিনী সম্প্রতি কুরস্ক অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সেখানে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাকি অল্প কিছু অংশ দখলের চেষ্টায় রয়েছে তারা।"
আইএসডব্লিউ আরও জানিয়েছে, ২৫ এপ্রিল রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলগোরোদ অঞ্চলেও লড়াই চলমান ছিল।
শনিবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স বৈঠকে রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ভ্যালেরি গেরাসিমভ বলেন, "আজ কুরস্ক অঞ্চলের শেষ বসতি—গর্নাল গ্রাম ইউক্রেনের কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে।"
গেরাসিমভ দাবি করেছেন, কুরস্ক অঞ্চলে লড়াইয়ে ৭৬ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা হতাহত হয়েছে। তবে হতাহতের এ সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি উত্তর কোরিয়ার সেনাদেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি দলকে পরাজিত করতে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী 'গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা' করেছে।
গেরাসিমভের বক্তব্যের জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, "কিয়েভ শাসকগোষ্ঠীর অভিযান সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এর ফলে অন্যান্য ফ্রন্টেও রাশিয়ার আরও এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি হবে।"
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা এখন কুরস্কের পাশের ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলের কয়েকটি বসতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
টেলিগ্রামে একটি পোস্টে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাধারণ স্টাফ জানিয়েছে, যুদ্ধে পরিস্থিতি 'কঠিন'। তবে তারা বলেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও কুরস্কে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং কুরস্কের ঠিক দক্ষিণে বেলগোরোদ অঞ্চলে তাদের আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
গত আগস্টে দুই দেশের সীমান্তে একটি 'বাফার জোন' গঠনের উদ্দেশ্যে সেখানে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায় ইউক্রেন। সেখানে রুশ বাহিনী যাতে সেনা মোতায়েন করতে না পারে সে জন্যই তারা আক্রমণ চালায়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেন 'যুদ্ধ শেষ করার জন্য চুক্তির দ্বারপ্রান্তে' বলে জানিয়েছিলেন। তার এ মন্তব্যের একদিন পরই ইউক্রেন এ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে।
তবে গতকাল শনিবার পুতিনের যুদ্ধ শেষ করার ইচ্ছার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। তিনি এ সপ্তাহে কিয়েভে রাশিয়ার আক্রমণে কথা উল্লেখ করেছেন। এ আক্রমণে কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও ৯০ জন আহত হয়েছেন।
ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর এ মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউস শনিবারের বৈঠকটিকে ইতিবাচক বলে বর্ণনা করেছে। জেলেনস্কি এ বৈঠককে 'ঐতিহাসিকভাবে প্রতীক' হয়ে থাকার মতো বৈঠক বলেছেন। তারা আশা করছেন তারা এতে সফল হবেন।
শুক্রবার বিবিসি-কে জেলেনস্কি বলেন, তিনি 'পূর্ণ এবং নিঃশর্ত অস্ত্রবিরতি' চান। এরপরই কোনো চুক্তি হবে।
যুদ্ধ শেষ করার জন্য যেকোনো চুক্তির অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকার ছেড়ে দেওয়ার জন্য কিয়েভকে চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প। এ অংশ হিসেবে ক্রিমিয়ান উপদ্বীপ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব আসতে পারে। এটি ২০১৪ সালে অবৈধভাবে দখল করে নেয় রাশিয়া।
তবে জেলেনস্কি বারবার এমন ছাড় প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন।
ইউক্রেন আশা করেছিল, কুরস্কের বিনিময়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনা করবে তারা। কিন্তু ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এলাকার ২০ শতাংশই দখল করে নিয়েছে রাশিয়া।